ভারতে ধর্মীয় উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মহারাষ্ট্র। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের এক বিতর্কিত হিন্দু ধর্ম প্রচারক এবং বিজেপির একজন বিধায়কের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ভেতর চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইসলাম ধর্মের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করা হয়, যা দেশব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
বিতর্কিত মন্তব্যের সূত্রপাত
ঘটনার সূত্রপাত হয় মহারাষ্ট্রের এক ধর্মীয় সভায়, যেখানে রামগিরি মহারাজ নামে এক বিতর্কিত হিন্দু ধর্ম প্রচারক মহানবী (সা.) এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেন। এই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতি সমর্থন জানান রাজ্যেরই কট্টরপন্থী বিজেপি বিধায়ক নিতেশ রানা। শুধু সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, বরং মুসলিমদের মসজিদে ঢুকে আক্রমণ চালানোরও হুমকি দেন। এমন বক্তব্য মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
মুসলিমদের প্রতিবাদ: লংমার্চ ও জনসমুদ্র
মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মহারাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। মুসলিম সম্প্রদায় এই ঘটনায় ফুঁসে ওঠে এবং হাজার হাজার মানুষ মুম্বাই অভিমুখে লংমার্চ শুরু করে। বিভিন্ন মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়, যেখানে প্রতিবাদকারীরা ধর্মীয় অবমাননার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও তাদের দাবি ছিলো স্পষ্ট: ধর্মীয় অবমাননার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলার দায়ের
নিতেশ রানার বিতর্কিত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মহারাষ্ট্র রাজ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক মহল থেকেও এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি ও প্রতিক্রিয়া
মহানবী (সা.)-কে অবমাননা এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি কটুক্তি করা শুধু ভারতের মুসলিমদের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, তখন তা শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মহারাষ্ট্রের মুসলিমরা এই ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন এবং রাজ্য সরকারকে দ্রুত এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহারাষ্ট্র সরকারের প্রতিক্রিয়া
রাজ্য সরকার এ ঘটনায় এখনও সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও মহারাষ্ট্র পুলিশ বিভাগ ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে, যা নিয়ে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত এবং কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বরদাস্ত করবে না।