শেরপুর প্রতিনিধি | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শেরপুর জেলা কারাগারে ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলার পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কারাগারটি এখনও সচল করা সম্ভব হয়নি। এই হামলা-ভাঙচুরের ফলে কারাগারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং কারাগার থেকে পালিয়ে যায় ৫১৮ জন হাজতি ও কয়েদি। তাদের মধ্যে এখনও প্রায় ৪০০ জন পলাতক রয়েছে। এই ঘটনায় আশঙ্কাজনকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে শেরপুর জেলা, এবং কারাগার সচল না থাকায় নতুন করে আটক আসামিদের পাশের জেলা কারাগারগুলোতে স্থানান্তর করতে হচ্ছে।
কারাগারে হামলার পেছনের কারণ
৫ আগস্টের হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সশস্ত্র সংঘাত ছিল মূল প্রভাবক। এদিন বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শেরপুর জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগারের সমস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কারারক্ষীরা কারাগার ছেড়ে পালিয়ে যান।
এরপর প্রায় ৮-১০ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ৫১৮ জন বন্দি কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং প্রায় ৭০-৮০ জন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ছিল। বাকিরা বিভিন্ন মামলার বিচারাধীন এবং তদন্তাধীন হাজতি ছিল।
হামলার পর ধ্বংসযজ্ঞ
হামলার সময়কারা ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ৬১টি অস্ত্রের মধ্যে নয়টি অস্ত্র লুট করা হয় এবং বেশ কয়েকটি গুলি, কারাবন্দিদের মজুত খাবার এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীও লুট হয়। কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং তাদের সহায়তায় কিছু অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। কিন্তু ততক্ষণে পুরো কারাগার বিধ্বস্ত হয়ে যায়।
মামলা ও আইনগত পদক্ষেপ
হামলার কয়েকদিন পর কারাগারের জেলার লিপি রানি সাহা বাদী হয়ে ১০-১২ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে লুট হওয়া নয়টি অস্ত্র উদ্ধার করা গেলেও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী এবং কিছু গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি। পলাতক হাজতি-কয়েদিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের মধ্যে ৯৯ জন জামিন পেয়েছে এবং বাকিদের পাশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারাগার সচল না হওয়ার প্রভাব
কারাগারটি এখনও অচল থাকায় শেরপুর জেলার নতুন করে আটককৃত আসামিদের পাশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এ কারণে শেরপুর জেলার আইন ও বিচার বিভাগের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারের মেরামত কাজ সম্পন্ন করে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে আবার কারাগারটি সচল করা সম্ভব হবে।
মেরামত কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শেরপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. হুমায়ুন কবীর খান জানান, ঘটনার পরপরই কারা অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে এবং দ্রুত কারাগার চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মাহবুবুর রহমান জানান, মেরামত কাজের টেন্ডার আহ্বান এবং প্রক্রিয়ার কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে কারাগার সচল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসনের ভূমিকা
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “ধ্বংসস্তূপ থেকে কারাগারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ শেষ করে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলা কারাগার সচল করা সম্ভব হবে।” এছাড়া কারাগারকেন্দ্রিক নানা সমস্যারও সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।