কুমিল্লা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২০১৫ সালে আট বাসযাত্রীকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যার ঘটনা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ, যা সে সময় বিএনপি এবং জামায়াতকে ফাঁসানোর জন্য করা হয়েছিল। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মনিরুল হক চৌধুরী মঙ্গলবার কুমিল্লা আদালতের আইনজীবী সমিতি ভবনের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিটি করেন।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির সময় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়ে আটজন যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল এবং বিএনপি ও এর সহযোগী দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকারিভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
মনিরুল হক চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল এবং রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি-জামায়াতকে ফাঁসানো এবং রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করা। তিনি বলেন, “এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবগত করেছিলেন, এবং পরে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবকে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।”
এছাড়াও, তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, ওই বাসের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবুল খায়ের কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং কুমিল্লার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করে মোট ১৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটি চৌদ্দগ্রাম থানায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষের আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু জানান, এই মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদালতে পুলিশের দায়ের করা মামলাটির শুনানির তারিখ নির্ধারিত ছিল, তবে আদালত মামলার পরবর্তী তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন। নতুন তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
ঘটনার পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০১৫ সালে হরতাল ও অবরোধ চলাকালীন সময়ে এই ঘটনাটি ঘটে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচণ্ড উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সরকার এই ঘটনার দায় বিএনপি এবং জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং সে সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিএনপি সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, এই ঘটনা তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা
দীর্ঘ সাড়ে নয় বছর পর বিএনপি থেকে নতুন করে এই দাবি তোলার পর মামলাটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। কুমিল্লার আদালতে মঙ্গলবারের শুনানি শেষে জানা যায় যে, মামলার তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নতুন তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
বিএনপির অভিযোগের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে বিএনপির এই অভিযোগের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং বিএনপির এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২০১৫ সালের চৌদ্দগ্রামের এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। এই ঘটনা থেকে উদ্ভূত রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপকভাবে অনুধাবিত হয়।
—