বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের সাইডলাইনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সংক্ষিপ্ত এই বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার উপায়, স্বাধীনতার বিস্তার, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের যুব সমাজের উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন “দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ”, একটি শিল্প বই যা বিপ্লবের সময় এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রছাত্রীদের আঁকা দেয়ালচিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে। ট্রুডো অধ্যাপক ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গঠনে কানাডার সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বর্ণনা করেন কিভাবে পূর্ববর্তী শাসন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে এবং প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি কানাডার বন্ধুত্ব ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থনের জন্য কানাডার সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
অধ্যাপক ইউনূস আরও অনুরোধ করেন, কানাডা যেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ভিসার অনুমোদন দেয়। বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও সম্প্রসারণের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার প্রস্তাবনা দেন।
অধ্যাপক ইউনূস তার জাতিসংঘ সফর শুরু করেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি বিরল একান্ত বৈঠকে মিলিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এই সফরের সময় তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও, তিনি ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ এবং “ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ” এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বক্তব্য রাখবেন।
কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক:
বাংলাদেশ ও কানাডার সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ ও উন্নয়নমুখী। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালীকরণ এবং যুবসমাজের ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে এই বৈঠকটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরালো করার জন্য উভয় পক্ষই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষার জন্য কানাডাকে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে দেখে থাকে। কানাডার উচ্চ শিক্ষার মান এবং অভিবাসন নীতির সহায়ক পরিস্থিতি এই জনপ্রিয়তার একটি প্রধান কারণ। অধ্যাপক ইউনূসের অনুরোধে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডায় আরও বেশি ভিসার সুযোগ সৃষ্টি হলে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামীর করণীয়:
বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান থাকবে যে, বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী ও সুষ্ঠু প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কানাডা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গঠনে সহায়তা করবে এবং বাংলাদেশের জন্য একটি আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের এই সাধারণ পরিষদের বৈঠক এবং পার্শ্ব বৈঠকগুলোতে অধ্যাপক ইউনূসের কার্যক্রম এবং বক্তব্য বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।
তার সফর শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকগুলো থেকে কী ফলাফল আসে তা নিয়েও বিশ্বজুড়ে বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূসের এই জাতিসংঘ সফর এবং বৈঠকগুলো বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে ইতিবাচক ফলাফল এনে দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মতামত।
এই প্রতিবেদনে অধ্যাপক ইউনূসের সফর ও বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।