সম্প্রতি প্রকাশিত ওকলার স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স থেকে জানা গেছে যে, গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ৯৯তম, যা আগের মাসে ছিল ১০১তম। এই উন্নতির ফলে দেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা আরো গতিশীল এবং কার্যকর হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওকলার প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড ছিল ৪৮.১৪ এমবিপিএস। এই ডাউনলোড স্পিডের পাশাপাশি, আপলোড স্পিড ছিল ৪৭.৩১ এমবিপিএস, যা দেশের ইন্টারনেটের গুণমানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও, মেডিয়ান ল্যাটেনসি ছিল ৫ মিলিসেকেন্ড—এটি ইন্টারনেটের গতি এবং সেবার স্থিতিশীলতা আরও মজবুত করেছে, যার ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা আরও দ্রুত এবং সহজে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছেন।
অন্যদিকে, মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও, বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট র্যাংকিং গত আগস্ট মাসেও অপরিবর্তিত ছিল। বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট গতির অবস্থান ৮৯তম, যা জুলাই মাসের তুলনাতেও একই রয়ে গেছে।
ওকলার তথ্য অনুসারে, আগস্ট মাসে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ২৭.৭৬ এমবিপিএস। এর পাশাপাশি আপলোড স্পিড ছিল ১১.২২ এমবিপিএস, এবং মেডিয়ান ল্যাটেনসি ছিল ২৫ মিলিসেকেন্ড। মোবাইল ইন্টারনেটে এই গতির মান ধরে রাখতে পারলেও, বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পরিবর্তিত হয়নি।
ওকলার স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইন্টারনেটের গতি এবং মানে সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষে রয়েছে। আগস্ট মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড ছিল ২৯৭.৬২ এমবিপিএস এবং আপলোড স্পিড ছিল ১৪৭.৫০ এমবিপিএস। একই সময়ে, মোবাইল ইন্টারনেটের ডাউনলোড স্পিড ছিল ৩৯৮.৫১ এমবিপিএস এবং আপলোড স্পিড ছিল ২৭.৬৫ এমবিপিএস।
বাংলাদেশের তুলনায় প্রতিবেশী দেশ ভারত মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে আরও এগিয়ে রয়েছে। ভারতের মোবাইল ইন্টারনেট গতির তালিকায় অবস্থান ২০তম এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে অবস্থান ৮৪তম। অন্যদিকে, পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে। ওকলার তালিকায় পাকিস্তান মোবাইল ইন্টারনেটে ১০১তম এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ১৪৩তম অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির ফলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ইন্টারনেটের মান বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবায় আরও উন্নতি হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষ করে, ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড উন্নত হওয়ায় অফিসিয়াল কাজ, ভিডিও কনফারেন্সিং, অনলাইন শিক্ষা, এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কার্যক্রম সহজতর হয়েছে। এছাড়াও, মোবাইল ইন্টারনেটের স্পিড বেড়ে যাওয়ায় মোবাইল ব্যবহারকারীরা তাদের প্রতিদিনের ইন্টারনেট ভিত্তিক কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারছেন।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি এবং গুণমান বৃদ্ধির পেছনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেটের গতি আরও উন্নত হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে এবং বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ এখনও উন্নত নয়। এছাড়া, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধির পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবার মান এবং স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটের মূল্যও নাগালের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে সাধারণ জনগণও এর সুফল পেতে পারে।
ওকলার স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্সে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি দেশটির ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় একটি ইতিবাচক দিক। তবে, আরও উন্নত এবং কার্যকর ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করতে হলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, নীতিমালা প্রণয়ন, এবং অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।