বায়ুদূষণ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে পরিচিত, যা পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে, যার মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কর্মকাণ্ড। বিশেষ করে জনবহুল নগরীগুলোতে বায়ুদূষণ মাত্রার বেশি, যা মানবজীবন ও প্রাণীকুলের জন্য মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (আইকিউএয়ার) থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের লাহোর ১৭৯ একিউআই স্কোর নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। এর পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরব আমিরাতের দুবাই, যার স্কোর ১৪১। তৃতীয় স্থানে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ১৩০ স্কোর নিয়ে অবস্থান করছে। উগান্ডার কাম্পালা ১২৪ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে এবং উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ১১৭ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
ঢাকার ক্ষেত্রে, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে রেকর্ড করা একিউআই স্কোর ছিল ৯৬, যা বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ৮ম স্থানে রয়েছে। যদিও ঢাকার বায়ুমানকে ‘মাঝারি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে এটি এখনও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) অনুযায়ী বায়ুর মানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে একিউআই স্কোর ভালো হিসেবে ধরা হয়, ৫১ থেকে ১০০ স্কোর মাঝারি এবং ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে বায়ুমানকে অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়।
ঢাকার বর্তমান স্কোর ৯৬ হওয়ায় তা মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বায়ুদূষণের এই মাত্রা অব্যাহত থাকলে তা ভবিষ্যতে বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি উৎস হলো:
1. ইটভাটা: শহরতলীতে অবস্থিত হাজার হাজার ইটভাটার ধোঁয়া শহরের বায়ুমানকে প্রতিনিয়ত খারাপ করছে।
2. যানবাহনের ধোঁয়া: ঢাকা শহরের অত্যাধিক যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।
3. নির্মাণ কাজের ধুলো: নগরীর বিভিন্ন নির্মাণ সাইট থেকে আসা ধুলো এবং অন্যান্য পার্টিকেলও বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, বায়ুদূষণ স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), ফুসফুসের ক্যানসার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বায়ুদূষণ সব বয়সের মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও, বিশেষ করে শিশু, প্রবীণ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
যদিও ঢাকায় বৃষ্টির কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কমেছে, তবে দীর্ঘমেয়াদীভাবে এই দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ইটভাটার উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণ সাইটে সঠিক নিয়ম মেনে কাজ করার মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব। তবে এর জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে যুক্ত হতে হবে।