সরকার কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকলকে জাতীয় ডাটা সেন্টারের জন্য ক্লাউড সেবার দায়িত্ব দেয়। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা এই চুক্তির অধীনে ওরাকলকে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ২০৭ কোটি টাকা) প্রদান করার কথা ছিল। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের আড়াই বছর পর ওরাকল ক্লাউড সেবা চালু করে, যা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের ভূমিকা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
সরকারি এই প্রক্রিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের চাপেই দরপত্র আহ্বান ছাড়াই ওরাকলকে সরাসরি কাজ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেছেন, পলক এ কাজের বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন এবং প্রভাবশালী একটি পক্ষও সেই অর্থের ভাগ পেয়েছিল।
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) তৎকালীন পরিচালক তারিক এম বরকতউল্লাহ এই প্রক্রিয়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তারিক বরকতউল্লাহ প্রস্তাবিত কমিটির একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি ওরাকলের পক্ষে মত দেন, যদিও বাকি সদস্যরা এর বিরোধিতা করেছিলেন।
আমদানি জটিলতা ও কাস্টমস জালিয়াতির অভিযোগ
ওরাকলের যন্ত্রাংশ আমদানি করার সময় শুল্কমুক্ত সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটকিয়ে দেয়। এরপর ওরাকল মোটা অঙ্কের শুল্ক দিয়ে যন্ত্রাংশ খালাস করে। এই ঘটনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সম্পর্কও তিক্ত হয়। বলা হয়ে থাকে, পলক তার কমিশন কমিয়েছিলেন এই খালাস প্রক্রিয়ায়।
দক্ষতা সংকট ও ক্লাউড ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ
ডাটা সেন্টার এবং ক্লাউড প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, যে অর্থ ওরাকলে ব্যয় করা হয়েছে, তা দিয়ে দেশেই ক্লাউড সেবা তৈরি করা যেত। তবে ওরাকলের সেবাটি বর্তমানে অনেক সরকারি দপ্তর ব্যবহার করছে না, কারণ তারা এটি জটিল মনে করছে। ফলে এই সেবার সক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে এবং আয়ের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ওরাকলের প্রতিক্রিয়া
ওরাকলের পক্ষ থেকে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান রুবাবা দৌলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনসংযোগ শাখার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে পরে তিনি আর সাড়া দেননি।