জাতীয় সংগীত একটি দেশের জাতীয় পরিচয় ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সেই দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে তুলে ধরে। তবে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে, যা সাধারণত জাতীয় উন্নতি, লিঙ্গ সমতা, বা নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য করা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের কিছু দেশ সম্পর্কে, যারা বিভিন্ন কারণে তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে।
অস্ট্রেলিয়া:
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর। নতুন জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে আর অভিহিত করা হবে না। এই পরিবর্তনটি আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য করা হয়। এছাড়া, দেশের সমতাবিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন, যেখানে ‘ফাটারলান্ড’ (পিতৃভূমি) শব্দটির পরিবর্তে ‘হাইমাট’ (জন্মভূমি) শব্দটি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রিয়া:
২০১২ সালে লিঙ্গ সমতা আনার উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’ শব্দের জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কানাডা:
কানাডা সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে। সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-এর জায়গায় ‘আমরা সবাই’ শব্দটি সংযোজন করা হয়েছে।
নেপাল:
২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর আগে ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল, তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়।
আফগানিস্তান:
আফগানিস্তানে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তালেবান শাসনামলে কোনো জাতীয় সংগীত ছিল না। ২০০২ সালে পুরোনো জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনা হয় এবং পরে ২০০৬ সালে কারজাই সরকারের আমলে নতুন জাতীয় সংগীত প্রণয়ন করা হয়।
রুয়ান্ডা:
১৯৯৪ সালের গণহত্যার পর, রুয়ান্ডা তাদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ২০০১ সালে নতুন একটি জাতীয় সংগীত গ্রহণ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৭ সালে তাদের আগের দুটি জাতীয় সংগীতের অংশ নিয়ে একটি নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করে। এটি আফ্রিকান ও ইংরেজি ভাষায় রচিত। বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ থাকায় এটি সমালোচিত হলেও নেলসন ম্যান্ডেলা এই পরিবর্তনকে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য পুনর্মিলনের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
রাশিয়া:
ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৯৯০ সালের আগের জাতীয় সংগীত পুনরায় ফিরিয়ে আনেন। যদিও গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়, তবুও এটি ১৯৯০ সালের সংগীত থেকে অনেকটাই ভিন্ন। নতুন সংগীতে কথার অভাব থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া রুশ অ্যাথলিটরা আগের সংগীত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে