লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের পশ্চিম চর কলাকোপা গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ইউনুছ মিয়া বন্যার কারণে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর বয়সের ভারে হাত-পা কাঁপে, হাঁটতে গিয়ে প্রায়শই পড়ে যান, লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। সামান্য কিছু জমি এবং ছোট্ট একটি ঘর নিয়ে তাঁর সংসার, যা এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁর ঘরে হাঁটুসমান পানি উঠেছে, ঘরের বেড়াগুলোতে পচন ধরেছে, এবং আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। শুকানোর সুযোগ না পাওয়ায় চালও পচে গেছে।
এখন তিনি পশ্চিম চর কলাকোপা হাজী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। ইউনুছ মিয়া ছাড়াও গ্রামের ৩০টি পরিবারের সবাই ঘর ছেড়েছেন। তিনি জানান, বন্যায় তাঁর জীবন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে, কিভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করে আগের জীবনে ফিরবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাড়া করে ফিরছে তাঁকে।
লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় এমন অনেক মানুষই বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমছে তবে ধীরগতিতে। খালগুলো দখলে সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে পানি দ্রুত নামতে পারছে না। খাল খনন এবং দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি জোর দিয়েছেন।
স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল, যা বর্তমানে ৬ লাখে নেমে এসেছে। জেলার ৫৮টি ইউনিয়নের লাখ লাখ মানুষ সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।