ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পোলিও সংক্রমণ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজায় শিশুদের মধ্যে পোলিও টিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) থেকে এ টিকা কার্যক্রম শুরু হবে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, তারা গাজার ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুর বিরুদ্ধে উচ্চাভিলাষী পোলিও টিকা ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মধ্যে প্রথম ধাপে রোববার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে গাজায় থাকা ১০ বছরের কম বয়সী অন্তত ৯০ শতাংশ শিশুকে টিকার আওতায় আনতে হবে। গাজায় দীর্ঘ ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো পোলিও রোগী শনাক্ত হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগটি গাজার আরও অনেক শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি মোকাবিলা না করা গেলে পোলিওর আঞ্চলিক প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
এর আগে, ফিলিস্তিনের রামাল্লার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চিকিৎসকরা গাজার ১০ মাস বয়সী এক শিশুর শরীরে পোলিওর উপসর্গ শনাক্ত করেছেন। পরে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগটি ধরা পড়ে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার বর্জ্য পানি থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় গত জুনে টাইপ-২ পোলিও ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব গাজার শিশুদের জন্য সাত দিন করে দুই দফার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। এরপরই পোলিও সংক্রমণের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও প্রথম ধাপে তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল।
শুক্রবার, ফিলিস্তিনের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন বলেন, রোববার থেকে গাজায় পোলিওর টিকা দেওয়া শুরু হবে। এই তিন দিন স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি থাকবে এবং এ সময়েই টিকা দেওয়া হবে।
গাজায় পয়োব্যবস্থার অভাব, স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিবন্ধকতা ও টিকা সংকটে পোলিওর ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি এটি ইসরায়েলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকে গাজার ওপর বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার ২০ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং গাজার ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।