বাংলাদেশে গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের শাসনামলে অর্থনৈতিক সাফল্যের নানা মানদণ্ড অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের তথ্যগুলোর অসামঞ্জস্যতা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার। এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সরকারের অবাধ দুর্নীতির হিসাব জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশ্লেষক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে শেখ হাসিনার শাসনামলে অব্যবস্থাপনার একটি ‘শ্বেতপত্র’ তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছে। ভট্টাচার্যকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে, যা তিনি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ আগস্ট, ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রশাসন বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের সঠিক তথ্য পাওয়া নিয়ে একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে। তথ্যকে বানোয়াট করা হয়েছিল এবং দমন করা হয়েছিল। আমি এই নৈরাজ্যকে ‘ডেটা এনার্কি’ বলছি।”
ব্লুমবার্গের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বিশেষজ্ঞ অরুণ দেবনাথের একটি নিবন্ধে ভট্টাচার্যের এই বক্তব্যগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনার প্রশাসন সম্ভবত রপ্তানি, মুদ্রাস্ফীতি এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক দুর্বলতা তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তবে ভট্টাচার্য বলেন, এই সাফল্যের দাবিগুলো অনেকাংশে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা, যিনি এই মাসের শুরুতে গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, তিনি দেশটিতে ১৮ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন টাকা (১৫৩ বিলিয়ন ডলার) দেশী ও বিদেশী ঋণের বোঝা রেখে গেছেন, যা তিন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সমান।
ভট্টাচার্য বাংলাদেশে তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা চিহ্নিত করেছেন: সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তবে ইউক্রেন যুদ্ধকে এর জন্য দায়ী করে হাসিনার যুক্তি খুব একটা গ্রহণযোগ্য ছিল না বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের কর-টু-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। এই অনুপাত ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। তবে এই কম অনুপাতের পেছনে করের আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি দেশের বাইরে অর্থ পাচারও একটি বড় কারণ হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তাৎক্ষণিক কাজগুলোর মধ্যে বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ অন্যতম। এদিকে, নবনিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশটি জরুরি সহায়তা হিসেবে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং অন্যান্য বহু-পাক্ষিক ঋণদাতা সংস্থাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।