ডেস্ক রিপোর্ট — সকলের কণ্ঠ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সৃষ্ট সংকট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালেও ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে, ফলে বিপাকে পড়েছেন বিদেশগামী যাত্রীরা। বিশেষ করে ট্রানজিট যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতের নির্ধারিত বহু ফ্লাইট রোববার সকালে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিছু ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের ১০–১২ ঘণ্টা পর ছেড়েছে, আবার সকালের ফ্লাইটগুলোও গড়িমসি এড়াতে পারেনি—দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত দেরি হয়েছে।
এদিকে সকাল থেকেই কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভিড় করছেন আমদানি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কুরিয়ার সেকশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল সংরক্ষণাগারসহ আশপাশের এলাকায়। এতে পুড়ে যায় বিপুল পরিমাণ আমদানি করা মালামাল।
এক সিএন্ডএফ এজেন্ট বলেন, “কুরিয়ার সেকশন থেকে আগুন শুরু হয়ে মুহূর্তেই পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা নিজের চোখে দেখেছি, ধোঁয়ায় আকাশ কালো হয়ে যায়।”
পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজন উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, “আমদানি ক্ষতি ছাড়াও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। নতুন করে কাঁচামাল আনতে অতিরিক্ত খরচ হবে।”
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, দুপুর আড়াইটায় খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিমানবন্দর, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীসহ একাধিক সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করে রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি সম্পূর্ণ আমদানি কার্গো এলাকা, রপ্তানি কার্গো নিরাপদ রয়েছে।
আগুন লাগার পর সাময়িকভাবে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঢাকাগামী ৮টি ফ্লাইট চট্টগ্রাম, ৩টি সিলেট এবং ২টি কলকাতায় অবতরণ করে। রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিমানবন্দর পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
- অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, আহ্বায়ক — যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী।
- সদস্য: এনবিআরের প্রথম সচিব রইচ উদ্দিন খান, তারেক হাসান, কাস্টম হাউস ঢাকার যুগ্ম কমিশনার কামরুল হাসান, এবং উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া (সদস্য সচিব)।
- কমিটিকে দ্রুততম সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সাত সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে, সভাপতি — চিফ (ফ্লাইট সেফটি)।
- সদস্য: বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি এসুরেন্স), জিএম (কর্পোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), ডিএম (সিকিউরিটি) ও ডিএম (কার্গো-রপ্তানি)।
- প্রতিবেদন জমার সময়সীমা: পাঁচ কর্মদিবস।