ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
প্রায় তিন দশক পর সব সংশয় কাটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) শুরু হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল ও সিনেট নির্বাচন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও আনন্দের জোয়ার।
সকালে ভোটকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, ব্যানার, পোস্টার আর প্রাণবন্ত মুখগুলো জানিয়ে দিচ্ছিল— এই নির্বাচন কেবল ভোট নয়, বরং অধিকার ফিরে পাওয়ার উৎসব।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দশকের পর দশক তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বে ৩৫ বছর ধরে ঝুলে ছিল রাকসু নির্বাচন। অনেকের মতে, ফলাফল যাই হোক না কেন, এই নির্বাচন ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী অধিকার ও ইতিবাচক রাজনীতির পথ তৈরি করবে।
আজ সকাল ৯টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এবারের নির্বাচনে ৪৩টি পদে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯১৮ জন প্রার্থী।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১১টি প্যানেল, এর মধ্যে রয়েছে—
- ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম
- ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন পরিষদ।
মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন; এর মধ্যে ৬১ শতাংশ পুরুষ ও ৩৯ শতাংশ নারী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী,
- কেন্দ্রীয় সংসদে: ২৩টি পদ
- হল সংসদে: ১৫টি পদ
- সিনেট প্রতিনিধি পদে: ৫টি
মোট ৪৩টি পদে ভোট হচ্ছে।
প্রতিটি ভোটারের জন্য বরাদ্দ ১০ মিনিট সময়, অর্থাৎ প্রতি ভোটে গড়ে ১৪ সেকেন্ড সময় পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
১৭ কেন্দ্রের ৯৯০ বুথে একযোগে চলছে ভোটগ্রহণ।
ভোট শুরু হওয়ার আগেই ভোটারদের লম্বা সারি দেখা যায়। প্রবেশপথে একাধিক ধাপে পরিচয় যাচাই, স্ক্যানিং ও নিরাপত্তা চেক চলছে।
বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা ভোটারদের পরিচয় নিশ্চিত করে কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন।
সতেন্দ্রনাথ বসু ভবনে শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ও মতিহার হলের ভোটগ্রহণ চলছে। শেরে বাংলা কেন্দ্রে ১,৮৭১ জন ভোটার ও মতিহার কেন্দ্রে ৯৯৩ জন ভোটার রয়েছেন।
ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত বুথ থাকায় ভোটগ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন,
“কোনো জটিলতা ছাড়াই ভোট দিতে পারছি। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থাকায় সমস্যা হচ্ছে না। অতীতে অনেক সিনিয়র ভাই ভোট দিতে পারেননি, আমরা ভাগ্যবান।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“ফল যাই হোক, আমরা চাই নির্বাচিতরা যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেন।”
শেরে বাংলা হলের ভিপি প্রার্থী রানা হোসেন বলেন,
“ভোটগ্রহণ এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। আনন্দ আর উৎসবের পরিবেশে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি বেছে নিচ্ছেন।”
জাবির ইবনে হাইয়ান ভবনের ভোটকেন্দ্রে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন বলেন,
“৩৫ বছর পর ভোট, তাই সবার আনন্দও একটু বেশি। এবার যোগ্যতা, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই প্রার্থী বেছে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।”
রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. আল-আমিন সরকার জানান,
“এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ভোটাররা আসছেন, ভোট দিচ্ছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাচ্ছেন।”