দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে অঙ্গীকার, কিন্তু এখনই নয় স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগিয়ে এসেছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্তত ১০টি দেশ। কিন্তু একই সময়ে নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, তারা এখনই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। যদিও দেশটি স্পষ্ট করেছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের অঙ্গীকার অটল রয়েছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স। তিনি বলেন,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ঘোষণা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। হামাস এখনো গাজার কার্যত শাসন করছে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো কী হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই।”
তিনি আরও জানান, এখন স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনলে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জটিল হয়ে পড়তে পারে এবং ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষকে আরও একগুঁয়ে করে তুলতে পারে।
নিউজিল্যান্ডের এই অবস্থান দেশটির ঐতিহ্যবাহী অংশীদারদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। গত রবিবার অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা জাতিসংঘের ১৪০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে, যারা বহুদিন ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি সমর্থন করে আসছে।
তবে নিউজিল্যান্ড সরকার বলছে, তারা সঠিক সময়ে এ পদক্ষেপ নেবে—যখন শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা আরও স্পষ্ট হবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে নিউজিল্যান্ড সরকার জানায়,
“আমরা আশা করি এমন এক সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারব, যখন তা শান্তি আলোচনার জন্য ইতিবাচক সুযোগ তৈরি করবে।”
অর্থাৎ দেশটির অবস্থান একেবারে স্বীকৃতি-বিরোধী নয়, বরং সময় ও প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় রেখে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড সরকারের এই অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছে বিরোধী লেবার পার্টি। দলটির বিদেশবিষয়ক মুখপাত্র পিনি হেনারে বলেন,
“সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুরো নিউজিল্যান্ডবাসীকে হতাশ করেছে। এটি আমাদের ইতিহাসের ভুল পাশে দাঁড় করাবে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি বা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কখনো সম্ভব নয়।”
বিশ্বের অনেক দেশ যখন একে একে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তখন নিউজিল্যান্ডের এই দ্বিধান্বিত অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
- একদিকে তারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান জানাচ্ছে।
- অন্যদিকে সময়োপযোগী না হওয়ায় এখনই স্বীকৃতি দিতে চাইছে না।
এমন অবস্থান মূলত তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্য রাখার কৌশল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিউজিল্যান্ড ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দেরি করছে, তবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন জানিয়ে তাদের কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছে। সরকার বলছে, সঠিক সময়ে স্বীকৃতি দেবে তারা। কিন্তু বিরোধীরা মনে করছে, এই বিলম্ব নিউজিল্যান্ডকে বিশ্ব রাজনীতির ভুল পাশে দাঁড় করাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল এখন দেখছে, আসন্ন মাসগুলোতে নিউজিল্যান্ড তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আনে কিনা, নাকি দীর্ঘমেয়াদে এই দ্বিধান্বিত অবস্থান বজায় রাখে।