ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক পিএলসি ভয়াবহ খেলাপি ঋণের চাপের মুখে পড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৭৬ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই আটকে আছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
জনতা ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে এসব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে নগদ আদায় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে, মোট খেলাপি ঋণ থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ২৪৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। দুর্বল এই আদায় ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকটি মারাত্মক তারল্য সংকটে রয়েছে।
ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের তালিকায় রয়েছে—বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, রানাকা গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ, রিমেক্স ফুটওয়্যার, শিকদার গ্রুপ, জনকণ্ঠ গ্রুপ, লিথুন ফ্যাব্রিক্স, হাবিব হোটেল, লেক্সকো লিমিটেড, চৌধুরী গ্রুপ, আনন্দ শিপইয়ার্ড, বিআর শিপিং মিলস, ঢাকা নর্থ পাওয়ার, ইব্রাহিম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ডেল্টা কম্পোজিট ও আদিল করপোরেশন।
খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিও রেকর্ড পরিমাণে পৌঁছেছে। জুন শেষে এ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকের মূলধন এখন ঋণাত্মক ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
নিট সুদ আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় ব্যাংকটি টানা লোকসানে পড়েছে। ২০২৩ সালে জনতা ব্যাংক লোকসান করে ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকা, অথচ ২০২২ সালে মুনাফা হয়েছিল ৬২ কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেই লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১ কোটি টাকা।
শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন,
“শুধু জনতা ব্যাংক নয়, দেশের সব ব্যাংকেরই শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চিত্র প্রায় একই রকম। তবুও আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি, আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতায় জনতা ব্যাংকে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক ঋণগ্রহীতা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বা গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে শীর্ষ গ্রুপগুলোর কাছ থেকে ঋণ আদায় কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।