ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঝটিকা মিছিল করছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা। পুলিশের নজর এড়িয়ে ভিন্ন কৌশলে এসব মিছিল আয়োজন করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, এসব মিছিলে ভাড়া করা শ্রমিকও অংশ নিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সিটি সার্ভিসের হিউম্যান হলারে করে ১৫-২০ জন সদস্য হঠাৎ নিরিবিলি এলাকায় নেমে আসে। মুখে মাস্ক পরে ব্যানার খুলে মাত্র ৩০-৪০ সেকেন্ড ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে দৌড়ে মিছিল করে আবার ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
মিছিলে থাকা কয়েকজন সদস্য ভিডিও ধারণ করে তা পলাতক নেতাদের কাছে পাঠায়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, নগরে অন্তত পাঁচটি গ্রুপ নিয়মিত এসব ঝটিকা মিছিল করছে। এর মধ্যে তিনটি গ্রুপ সমন্বয় করছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও পলাতক নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আরেকটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠরা।
নওফেল ভার্চুয়ালি তার গ্রুপগুলো পরিচালনা করছেন এবং ফেসবুকের গুজব ছড়ানো পেজসহ নিজের ভেরিফায়েড পেজেও এসব মিছিলের ভিডিও প্রকাশ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব মিছিলে শুধু দলীয় কর্মী নয়, ভাড়া করা দিনমজুরও অংশ নিচ্ছে। আনোয়ারা, কর্ণফুলী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া ও চন্দনাইশ থেকে শ্রমিকদের ট্রাকে করে শহরে আনা হয়।
প্রতিজনকে যাতায়াত ভাড়া, দুবেলা খাবারের পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে চার-পাঁচ হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন—
> “সকালে ইউনিয়ন থেকে ডেকে আনা হয়। শহরে গিয়ে শুধু মিছিলে হাঁটতে হয়। বিকালে আবার ট্রাকে করে গ্রামে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
আগ্রাবাদের এক মুদি দোকানি জানান,
> “হঠাৎ দেখি ট্রাক থেকে লোকজন নামছে। মাস্ক পরে ব্যানার হাতে নিয়ে ২ মিনিটের মধ্যেই স্লোগান শুরু করে দেয়। মোটরসাইকেল থেকে একজন ভিডিও করে। তিন মিনিটের মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়।”
রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে, সম্প্রতি ভারতে ব্যবসায়ী এস আলমের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়। দেশব্যাপী মিছিল আয়োজনের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বাজেট করা হয়েছে। সেই টাকায় ভাড়ায় লোক এনে মিছিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণেও সম্প্রতি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিল হয়। সেখানে ব্যানারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির ছবি দেখা যায়। একই দিন আদালতে নেওয়ার পথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার তানিমের পক্ষে আইনজীবীরাও স্লোগান দেন।
চট্টগ্রাম আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী বলেন,
> “নিষিদ্ধ সংগঠনের আইনজীবীরা আদালতে স্লোগান দিয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি এবং সমিতি থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন,
> “শহরে যারা মিছিল করছে তাদের বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসছে। এ কারণে স্থানীয়রা চিনতে পারছে না। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের চিহ্নিত করেছি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। শিগগিরই সমন্বিত অভিযানে নামা হবে।”