স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৮ বছর পর সাবেক প্রতিমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তন, তারেক রহমানের ফেরার ইঙ্গিত
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের আলোচনায় এলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর। প্রায় ১৮ বছর পর তিনি রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাবর বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারতে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সঙ্গে শেখ হাসিনার একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকছে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
বাবর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। তবে কিছু বিষয়ে দলের উদ্বেগ আছে, আর সেগুলো নিয়েই সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তিনি। তিনি স্পষ্ট করেন, দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অবৈধ অস্ত্র প্রসঙ্গে বাবর বলেন, “দেশে অস্ত্র ঢুকছে, এটি উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা আছে, তবে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাবর জানান, তিনি উদ্বিগ্ন কারণ ভারত সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তার মতে, কিছু বিশেষ গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পরিকল্পনায় যুক্ত, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাবরকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে তিনি আশাবাদী ভঙ্গিতে বলেন, “খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা তার আগমনের অপেক্ষায় আছেন।”
এই বক্তব্যে বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রত্যাশা ছিল দলের ভেতরে, আর বাবরের এ ঘোষণা সেই প্রত্যাশাকে আরও দৃঢ় করেছে।
লুৎফুজ্জামান বাবরের সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৭ সালে। সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘ ১৮ বছর পর তার ফেরত আসা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রোববার বিকেল ৪টা ২২ মিনিটে তিনি একাই মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। বিএনপির অন্য কোনো নেতা বা কর্মী এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন না। ফলে এটি ব্যক্তিগত নাকি দলীয় সিদ্ধান্ত—সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বাবরের অভিযোগ নতুন হলেও বিতর্কিত। কারণ, শেখ হাসিনা ও এস আলম গ্রুপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগে থেকেই নানা সমালোচনা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ হিসেবে এস আলমের প্রভাব উল্লেখযোগ্য, এবং তাদের কার্যক্রম প্রায়শই রাজনৈতিক সমীকরণে আলোচিত হয়। বাবরের বক্তব্যে বিরোধী মহলের সমালোচনা তীব্র হয়েছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা একে নিছক রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন।
বাবরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ, রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া বানচালের ষড়যন্ত্র সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
বাবরের বক্তব্যে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশা জেগেছে। তারা বিশ্বাস করছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়বে এবং রাজনৈতিক লড়াইয়ে বিএনপি নতুনভাবে এগিয়ে যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাবরের এ বক্তব্য শুধুমাত্র একটি অভিযোগ নয়, বরং একটি কৌশল। এর মাধ্যমে বিএনপি দেখাতে চাইছে যে তারা নির্বাচনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ এবং তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায়।
লুৎফুজ্জামান বাবরের ১৮ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। শেখ হাসিনা–এস আলম বৈঠক নিয়ে তার অভিযোগ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একই সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার ইঙ্গিত বিএনপির ভেতরে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন প্রশ্ন হলো—আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট কী প্রভাব ফেলবে, আর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগগুলো কতটা বাস্তব প্রমাণিত হবে।