আটটির বেশি দল এক প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে, সমঝোতা প্রক্রিয়ায় ইসলামি ও মধ্যপন্থি দলগুলো; ডিসেম্বরের আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা
—
ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৎপরতা বেড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে এবার বিশেষভাবে আলোচনায় ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যারা নির্বাচনের প্রস্তুতি, পদ্ধতিগত সংস্কার দাবি এবং জোট গঠনের কৌশল নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনায় রয়েছে।
জামায়াতের লক্ষ্য শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয়; বরং ইসলামী ও সমমনাদের নিয়ে একটি কার্যকর নির্বাচনি জোট তৈরি করা। এর অংশ হিসেবে তারা একদিকে সাংগঠনিক প্রস্তুতি জোরদার করছে, অন্যদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ ও বৈঠক চালাচ্ছে।
—
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রাথমিকভাবে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে আগেভাগেই মাঠে নেমেছে। দলীয় প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, সাংগঠনিক উপস্থিতি দৃশ্যমান করলে আলোচনায় তাদের গুরুত্ব বাড়বে এবং আসনভিত্তিক সমঝোতায় বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন—
> “আমরা একটি নির্বাচনি জোট গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সবার সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা চলছে। উল্লেখযোগ্য ইসলামি দলগুলো একত্রিত হলে বড় ধরনের জোট তৈরি হতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, নির্বাচনি রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া, পিআর পদ্ধতি (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) চালু এবং নির্বাচন সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
—
জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি: কেন্দ্রীয় ইস্যু
নির্বাচনের দাবিগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জুলাই সনদ এবং পিআর পদ্ধতি। জুলাই সনদের মূল কথা হলো—সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংসদ গঠন, যাতে প্রতিটি দলের প্রকৃত ভোট অনুযায়ী আসন বণ্টন হয়।
জামায়াতসহ অন্তত আটটি দল ইতিমধ্যেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি স্বীকার করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন—
> “আমরা পিআর পদ্ধতির দাবি করছি। যৌক্তিক দাবি হিসেবে আমরা এর পক্ষে অনড় আছি। পাশাপাশি জুলাই সনদের বাস্তবায়নও জরুরি।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন বাংলাদেশ ও সংস্কারের পক্ষে থাকা দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে আসবে এবং জামায়াতকে নিয়ে শক্তিশালী ইসলামি জোট তৈরি হবে।
—
সম্ভাব্য ইসলামি জোট: কারা থাকছে এক ছাতার নিচে?
বর্তমানে জামায়াত আশাবাদী অন্তত পাঁচটি ইসলামি দলকে নিয়ে জোট করার বিষয়ে। এগুলো হলো—
1. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
2. খেলাফত মজলিস
3. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
4. খেলাফত আন্দোলন
5. নেজামে ইসলাম পার্টি
এছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ আরও কিছু দলকে নিয়েও আলোচনা চলছে।
খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন—
> “আমরা ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। দেশবাসীর প্রত্যাশা—ইসলামপন্থিদের যেন একক প্রার্থী থাকে।”
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদও জানান, বৃহত্তর ইসলামি জোটের জন্য তারা কাজ করছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে জোট করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই বলেও তিনি স্পষ্ট করেছেন।
—
ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি মধ্যপন্থি কিছু দলও আলাদা একটি মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ মোর্চায় থাকতে পারে—
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)
গণঅধিকার পরিষদ
আপ বাংলাদেশ
এই মোর্চা পরবর্তীতে বড় কোনো জোটের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতায় যেতে পারে।
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল বলেন—
> “আমরা আপাতত নতুন জোটকে প্রাধান্য দিচ্ছি। না হলে বিএনপির সঙ্গেও যেতে পারি, তবে মুজিব ধারা হলে নয়।”
অন্যদিকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ জানান, গণঅধিকার পরিষদ ও আপ বাংলাদেশসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে তারা নতুন মোর্চা করার পরিকল্পনা করছেন।
—
গণঅধিকার পরিষদের দৃষ্টিভঙ্গি
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন—
> “আমরা এখনও কারও সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা চাই ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য হোক। প্রয়োজনে জাতীয় সরকার গঠনের দিকেও যাওয়া যেতে পারে।”
তিনি জানান, তাদের উদ্যোগে সম্প্রতি ২৩টি রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়েছে এবং শাহবাগের সমাবেশে ৩৩টি দল এক মঞ্চে এসেছে। এই ঐক্যকে তারা ধরে রাখতে চান।
—
বিএনপি প্রসঙ্গ: ইসলামি দলগুলোর দ্বিধা
যদিও বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোট করার কোনো ঘোষণা আসেনি, তবুও কিছু দল ভবিষ্যতে সমঝোতার দরজা খোলা রেখেছে। জামায়াত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির অতীত শাসনকাল নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দ্বিধা আছে। তাই ইসলামী দলগুলোর নেতৃত্বে নতুন একটি জোট হলে ভোটাররা বিকল্প হিসেবে তা গ্রহণ করতে পারেন।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন—
> “বিএনপি তো কয়েকবার ক্ষমতায় গেছে। জনগণ তাদের দেখেছে। এবার জামায়াত নেতৃত্বে নতুন জোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
—
সব দলই হিসাব-নিকাশ করছে ক্ষমতায় আসা কিংবা বিরোধী দলে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে ডিসেম্বর নাগাদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বেশিরভাগ দলই বলছে, লাভ-ক্ষতির ভারসাম্য বুঝে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এ কারণেই এখনো জোটের রূপরেখা স্পষ্ট হয়নি। তবে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলমান এবং নির্বাচনি মাঠে ইসলামি দলগুলো আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়।