ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বাংলাদেশের জনগণের বিপুল অংশ সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটকে জরুরি মনে করছেন। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজিং ইনস্টিটিউট (বিইআই) পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ৮১ শতাংশ মানুষ সংবিধান সংশোধনে গণভোট চান। একইসঙ্গে ৮৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছেন। আর রাজনৈতিক দলগুলোতে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি সমর্থন করেন ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় ‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ: জনমানুষের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিইআই সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির।
বিইআই-এর উপপরিচালক চৌধুরী সামিউল হক জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়জুড়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। ঢাকাসহ দেশের ১২টি জেলায় রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী, নারী ও যুব সমাজসহ মোট ১,৫০০ জনের মতামত নেওয়া হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী:
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চান মাত্র ২৪%
শুধু সংস্কার চান ১৯%
সংস্কার ও নির্বাচন দুটোর পক্ষে ৫৭%
সংবিধান সংশোধনে গণভোট চান ৮১%
সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চান ৮৩%
‘এক ব্যক্তি এক পদ’ সমর্থন করেন ৮৯.৫%
নারী প্রতিনিধিত্বে সরাসরি ভোট চান ৯১%
স্থানীয় সরকারে দলনিরপেক্ষ নির্বাচন চান ৭৯.৫%
এমপিদের হস্তক্ষেপ বন্ধে মত দিয়েছেন ৮৭%
রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে দলের ভেতরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ শতাংশ, আর দলের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা চান ৯৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে উত্তরণ মানে শুধু নির্বাচন নয়। দেশে তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও গণতন্ত্রের উত্তরণ হয়নি। কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জন্য একটি সুযোগ। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।”
রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা করে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-শিক্ষকদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলুষিত হচ্ছে।”
ডা. তাসনিম জারা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান তরুণ প্রজন্মের মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রত্যাখ্যান ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর জনগণের আস্থা নেই।”
সভাপতির বক্তব্যে হুমায়ুন কবির বলেন, “বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের উত্থান ঘটেছে, যারা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। আমরা এখন এক সন্ধিক্ষণে আছি, তাই ঐক্য ও সহনশীলতা জরুরি।”
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির সহ-সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন আহমেদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ জাসদের ড. মুশতাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ার, এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিন, প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি কোনো আন্দোলন ছিল না, বরং একটি অভ্যুত্থান বা বিপ্লব। নতুন প্রজন্ম বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর ওপর আস্থা হারিয়েছে এবং তারা ভিন্নধর্মী বাংলাদেশ দেখতে চায়।
তাদের মতে, কেবল নির্বাচন নয়—মৌলিক সংস্কারই গণতান্ত্রিক উত্তরণের মূল শর্ত।