ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী হলেন আবিদুল ইসলাম খান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান। তিনি ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি এবং রাজনৈতিক পথচলার কথা তুলে ধরেছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি জানান, ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের গণতান্ত্রিক ভোটাভুটির মাধ্যমে তাকে ভিপি পদে মনোনীত করা হয়। আর পরদিন ২০ আগস্ট সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নাম ঘোষণার মুহূর্তে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান। তার ভাষায়, “দায়িত্বের ভারে আতঙ্কিত ছিলাম, শুরু হয়েছিল জীবনের এক ঐতিহাসিক লড়াই।”
আবিদুল ইসলাম খান তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরুর কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার জীবন সংগ্রামে ভরপুর। শেখ হাসিনার শাসনামলে যখন গোটা ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের কবলে ছিল, তখন কয়েকজন তরুণ ছাত্রদলকর্মী মিলে প্রতিরোধের মশাল জ্বালিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, হলে থাকার সুযোগ কখনো হয়নি। গণরুম–গেস্টরুমের নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে স্লোগান তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দিন কেটেছে প্রতিরোধ আর লড়াইয়ের ভেতর দিয়ে।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে জুলাই মাসের স্মৃতি। তিনি লিখেছেন, রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ ও চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের মতো অকুতোভয় নেতাদের পথ অনুসরণ করেই তারা ঢাকার পথে পথে বুক পেতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছাত্রলীগ ও পুলিশের বুলেট, লাঠি, টিয়ারশেল উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
এই সময়টাকেই তিনি আখ্যা দিয়েছেন “আগুনঝরা জুলাই” নামে।
আবিদুল ইসলাম খান জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার প্রার্থিতা কোনো নিযুক্তি বা উপরের সিদ্ধান্তে আসেনি, বরং ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের গণতান্ত্রিক ভোটের মাধ্যমেই তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
তার ভাষায়:
“১৯ আগস্ট দিন থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা ভোট দেন। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমি ডাকসু ভিপি প্রার্থী মনোনীত হই। এটি শুধু আমার নয়, পুরো সংগঠনের একটি গণতান্ত্রিক সাফল্য।”
২০২৫ সালের ২০ আগস্ট সকালে ঢাকার প্রতীকী ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তার নাম ঘোষণা করা হয়। আবিদ জানান, সেই মুহূর্তে তিনি একদিকে স্তব্ধ হয়ে যান, অন্যদিকে দায়িত্বের বিশাল ভারে শঙ্কিতও হয়ে পড়েন।
তবে এটিকেই তিনি জীবনের অন্যতম ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখছেন।
স্ট্যাটাসে আবিদুল ইসলাম খান তার প্রাণপ্রিয় সংগঠন ছাত্রদলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। খুব অল্প সময়ের ক্যাম্পেইনে সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার ওপর আস্থা রেখে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন।
তিনি লিখেছেন,
- বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন
- টিএসসি ও বিভাগভিত্তিক ক্লাব
- জেলা-উপজেলা ভিত্তিক সংগঠন
- বাস কমিটি
- শিক্ষক ও কর্মচারীরা
— সবাই তাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন। এ কারণেই তিনি নিজেকে সারা জীবনের জন্য তাদের কাছে ঋণী বলে মনে করেন।
শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ তাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
- অনেকে ক্যাম্পাসে এসে দেখা করতে চেয়েছেন।
- বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুভকামনা জানিয়েছেন।
- নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে তিনি সবার সঙ্গে দেখা করতে না পারলেও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাদের প্রতি।
আবিদ লিখেছেন:
“আমাকে ক্ষমা করবেন, হয়তো সময় বের করতে পারিনি। কিন্তু আপনাদের এই ভালোবাসায় আমি চিরঋণী।”
তার স্ট্যাটাসের শেষাংশে আবিদুল ইসলাম খান লিখেছেন, সংগ্রাম শেষ হয়নি। অনৈতিকতার বিরুদ্ধে নৈতিকতার সংগ্রাম চলছেই।
তিনি বলেন,
- তাদের জীবনে কোনো হার-জিত নেই।
- প্রকৃত স্বার্থকতা হলো দায়িত্ব পালন করা।
- সত্যের বিপরীতে যাওয়া মানেই বিপথগামী হওয়া।
একই সঙ্গে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, যত প্রতিকূলতাই আসুক, তারা দায়িত্বের জায়গা থেকে সরে দাঁড়াবেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আবিদুল ইসলাম খানের প্রার্থিতা এবং ফেসবুক স্ট্যাটাস বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে এনেছে—
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই: এটি প্রমাণ করে, ছাত্রদলের ভেতরে অন্তত প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র কার্যকর হয়েছে।
- সংগ্রামী নেতৃত্বের উত্থান: আন্দোলন ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা নেতৃত্ব ছাত্ররাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও জনসম্পৃক্ততা: ছাত্রদলের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ক্লাব ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সেখানে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী হিসেবে আবিদুল ইসলাম খানের উত্থান প্রমাণ করে যে সংগ্রামী চেতনা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখনও নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উঠে আসা কথাগুলো শুধু একটি প্রার্থীর আবেগ নয়, বরং বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা ও সংকল্পের প্রতিচ্ছবি।