ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
ফেনী: জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ থাকা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বর্তমানে ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে অনিয়ম, মামলা বাণিজ্য এবং আসামিদের পালাতে সহায়তার মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা।
—
জুলাই আন্দোলনে গুলির অভিযোগ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় কারফিউ চলাকালে ফেনী শহরের ইসলামপুর ও ট্রাংক রোড এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন ডিবি কর্মকর্তা শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তাকে ফেনী মডেল থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
—
মামলা আসামিদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
২০২৪ সালের ২৫ জুন ফেনী পৌরসভার চাড়ীপুর এলাকার আজিজুল হক নামের এক মামলার আসামিকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেন ওসি শামসুজ্জামান। আজিজুল স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং বৈষম্যবিরোধী জুলাইযোদ্ধাদের করা মামলার আসামি।
অভিযোগে বলা হয়, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ফেনী মডেল থানার ওসি শামসুজ্জামান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই ক্লিয়ারেন্সটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আজিজুল হক ওই নথি ব্যবহার করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশের সার্ভার থেকে ক্লিয়ারেন্সটি সরিয়ে ফেলারও চেষ্টা করা হয়।
—
অভিযোগকারীর হুমকি ও প্রলোভন
অভিযোগকারী এক জুলাইযোদ্ধা জানান, ঘটনাটি প্রকাশ করার পর ওসি শামসুজ্জামান ও ডিএসবি সাইফুল ইসলাম তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এমনকি উপহার ও অর্থ দেওয়ার প্রলোভনও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে হুমকি-ধামকির মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে।
—
আরও আসামি পালানোর সহযোগিতা
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আলী মেম্বার, যুবলীগ নেতা কাজী শরিয়ত উল্যাহ জুয়েল ও মো. জিয়াকেও একই কৌশলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দেশ ছাড়তে সহায়তা করা হয়েছে।
—
জুলাইযোদ্ধাদের ক্ষোভ
জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা বলেন, “তখন ডিবি কর্মকর্তা শামসুজ্জামানসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ফ্যাসিস্টদের হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ও নিপীড়ন চালান। অথচ আজ তারাই বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করছেন।”
তারা আরও জানান, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় ফেনীতে সাতটি হত্যাসহ ২২টি মামলায় চার হাজারেরও বেশি আসামি থাকলেও বড় অপরাধীরা অধরাই রয়ে গেছে। এ বিষয়ে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
—
পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
তৎকালীন ডিবি ইন্সপেক্টর বর্তমানে কোর্ট ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম, ফেনী মডেল থানার এসআই বেলাল, আনোয়ার হোসেন, আলমগীর হোসেন, মোতাহের ও শহর ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও আন্দোলনকারীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। তাদের অনেকে এখনও বিভিন্ন থানায় দায়িত্বে থেকে মামলা বাণিজ্যে যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
—
পুলিশের বক্তব্য
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি শামসুজ্জামান বলেন,
“অনেককেই ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ভুলও হতে পারে। আজিজুল হকের ক্লিয়ারেন্সটি বাতিল করতে বলা হয়েছিল।”
পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন,
“নামের বানান বা বাবার নামের ভুলের কারণে অনেক সময় অপরাধীরা ক্লিয়ারেন্স পেয়ে যায়। তবে ভুল ধরা পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”