ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
সংস্কারের জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়ায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। অঙ্গীকারনামা অংশ থেকে বাদ পড়ছে সংবিধানের ওপরে সনদের প্রাধান্য এবং আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রহিত করার অঙ্গীকার। একই সঙ্গে বাতিল হতে পারে সনদের ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা আপিল বিভাগকে দেওয়ার প্রস্তাব। তবে সনদে বাস্তবায়ন পদ্ধতি যুক্ত করা হবে না; বরং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ আকারে সরকারকে তা দেবে এবং সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন পথে সনদ বাস্তবায়ন হবে।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ১৬ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে কমিশন সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য পাঠায়। এর মধ্যে ২৮টি দল মতামত দিয়েছে। কমিশনের সূত্র বলছে, বিএনপির আপত্তির কারণে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্যের অঙ্গীকারে পরিবর্তন আসছে। এখন বলা হবে— যেখানে সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন, সেসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানের চেয়ে প্রাধান্য পাবে সনদের সুপারিশ।
কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ভাষাগত কিছু পরিবর্তন আসবে অঙ্গীকারনামায়। তবে মূল চেতনা একই থাকবে।”
পূর্ণাঙ্গ খসড়ার তৃতীয় দফায় বলা হয়েছিল, সনদের ব্যাখ্যার একমাত্র ক্ষমতা থাকবে আপিল বিভাগের হাতে। বিএনপিসহ আটটি দল এতে রাজি হয়নি। কমিশন মনে করছে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সংস্কারের ব্যাখ্যা আদালত স্বাভাবিকভাবেই করবে। তাই আলাদা অঙ্গীকার রাখার প্রয়োজন নেই।
চতুর্থ দফায় ছিল— আদালতে সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। বিএনপি আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এতে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। কমিশন এখন ভাবছে, শুধুমাত্র সই করা দলগুলো সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলবে না— এভাবে ভাষা পরিবর্তন করা হবে।
কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ জানান, “রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। এবার আর কোনো পরিবর্তন আনা হবে না।”
আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে— সনদে বাস্তবায়ন পদ্ধতি উল্লেখ করা হবে না। বরং কমিশন বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ আকারে সরকারকে দেবে। সরকার নিজেই নির্ধারণ করবে কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন করবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এমন সুপারিশ তৈরি হবে যাতে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে তা টেকসই হয়।”
জানা গেছে, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি গণভোট বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন চায়। অন্যদিকে এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন সাংবিধানিক সভা বা গণপরিষদে যেতে চায়। তবে বিএনপিসহ ছয়টি দল সংসদ ছাড়া সংবিধান পরিবর্তনের কোনো পথ মানছে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দুই দফা আলোচনার পরও এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। তাই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে— বাস্তবায়ন পদ্ধতি সনদে যুক্ত করা হবে না।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সনদ চূড়ান্ত খসড়া আকারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এতে দুই খণ্ড থাকবে—
- প্রথম খণ্ডে প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশে তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব,
- দ্বিতীয় খণ্ডে সাংবিধানিক সংশোধনসাপেক্ষ সংস্কার।
এখন পর্যন্ত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৭৩টিতে দলগুলো একমত হয়েছে। তবে ১১টি মৌলিক সংস্কার নিয়ে দ্বিমত রয়ে গেছে, যার মধ্যে ৯টিতেই বিএনপির আপত্তি রয়েছে।
কমিশনের এক সদস্য বলেন, “গত ছয় মাসে সব চেষ্টা করেছি। এখন যেসব মতবিরোধ রয়ে গেছে, তা নিরসন সম্ভব নয়। সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু হবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদের পরিবর্তিত অঙ্গীকার রাজনৈতিক সমঝোতার নতুন ধাপ খুলে দিতে পারে, তবে তা কার্যকর করতে সরকারের ভূমিকা হবে নির্ধারক।