ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউস মোড়ে রেলওয়ের জমি দখল করে আলোচিত এরশাদ শিকদার ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করেছিলেন ‘সাদ মনি মার্কেট’। ২০০২ সালে তাঁর বিচার চলাকালে প্রশাসন মার্কেটটি ভেঙে দেয়। দীর্ঘ ২৩ বছর পর সেই একই জায়গায় ফের মার্কেট নির্মাণ শুরু হয়েছে। শুধু ওই স্থান নয়, এরশাদ শিকদারের প্রভাব বিস্তৃত পুরোনো নদীবন্দর ঘাট, আশপাশের পুকুর, মাঠ ও ফাঁকা জমিতেও আবার দখলের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদ (ফরিদ মোল্লা)। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁর তত্ত্বাবধানেই একের পর এক মার্কেট ও দোকান গড়ে উঠছে। তবে ফরিদ মোল্লা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অন্যায়ভাবে এক টাকাও খাই না। রেলওয়ে কি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে? দেয়নি। তাহলে আমি দখলবাজ হলাম কীভাবে? এসব প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র।”
বিভিন্ন মহলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খুলনা মহানগর বিএনপি ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও দখলের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ফরিদ মোল্লার এক মাসের আটকাদেশের আবেদন করেছে স্থানীয় পুলিশ।
রেলওয়ের চিকিৎসক বাসভবন ‘ডাক্তারবাড়ি’ ও রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানা ভেঙে গত ৯ মার্চ রাতারাতি সেখানে ১৪টি দোকান নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে নতুন প্রাচীরও তোলা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, দোকানগুলো ফরিদ মোল্লার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন।
রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “কারা ভেঙেছে জানি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করেছি।” তবে ফরিদ মোল্লা দাবি করেন, এটি তাঁর কাজ নয়, মামলায় জড়িত অন্যরা দোকান তুলেছে।
৬ নম্বর ঘাট এলাকার বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের পাশে থাকা খালি জমি ২০২১ সালে ঈদগাহ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের পর ফের সেখানে মার্কেট তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোমধ্যে ১৬টি টিনের ঘর নির্মাণ হয়েছে। ঘরের একটিতে ঝুলছে “ইজারা গ্রহীতা তানভীর আহমেদ বাঁধন”—যিনি ফরিদ মোল্লার ছেলে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মার্কেট নির্মাণে বাধা দিলে ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে গালিগালাজ করেন ফরিদ মোল্লা। তবে তিনি দাবি করেন, “ওটা কোনোদিনই ঈদগাহ ছিল না। অল্প কিছু জমি আমার ছেলের নামে, বাকিটা অন্যদের নামে নেওয়া।”
পাওয়ার হাউস মোড় ও পুরাতন রেলস্টেশনের জমি নিয়েও সংঘর্ষ বাধে। ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজির উদ্দিন নান্নুর নামে ইজারা থাকলেও ওই জমিতে দোকান নির্মাণ করেন ফরিদ মোল্লা। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় দুই নেতার মধ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেট নির্মাণে ফরিদ মোল্লার সহযোগী ছিলেন বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম শফি।
রেলওয়ের খুলনা ফিল্ড কাননুগো মো. সহিদুজ্জামান বলেন, “ভৈরবীর ৮০০ বর্গফুট ও পাশে আরও ৮০০ বর্গফুট জায়গা ফরিদ মোল্লা ও শফিকুল ইসলাম ইজারা নিয়েছেন। তবে ডাক্তারবাড়ি ও ৬ নম্বর ঘাটে নির্মিত মার্কেট অবৈধ। এগুলো যেকোনো সময় ভেঙে দেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয় নেতাদের প্রশ্রয়েই ফরিদ মোল্লা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন বলেন, “ঢালাও অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে কিছু প্রমাণ পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।”
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “ফরিদ মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা বা জিডি না থাকায় সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে নানা অভিযোগের কারণে তাঁর এক মাসের আটকাদেশ চেয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে।”