দেশের ৬ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিল সরকার
বাংলাদেশে প্রশাসনিক কাঠামোতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জেলা পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে একজন ডিসি শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, উন্নয়ন কার্যক্রম, ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, ভূমি প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ কারণে একজন জেলা প্রশাসকের ভূমিকা সরাসরি প্রভাব ফেলে জেলার মানুষ ও সামগ্রিক প্রশাসনের ওপর।
সম্প্রতি সরকার দেশের ৬টি জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে। সোমবার (২৫ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোনা ও খুলনা জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী → নতুন জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালী।
- বর্তমান পটুয়াখালীর ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন → নতুন জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া।
- মেহেরপুরের ডিসি সিফাত মেহনাজ → নতুন জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম।
- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম → নতুন জেলা প্রশাসক, মেহেরপুর।
- ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান → নতুন জেলা প্রশাসক, নেত্রকোনা।
- কুষ্টিয়ার বর্তমান ডিসি মো. তৌফিকুর রহমান → নতুন জেলা প্রশাসক, খুলনা।
প্রশাসনিক রদবদল বাংলাদেশে একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। সাধারণত প্রতি কয়েক বছর অন্তর মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের নতুন জেলায় বদলি করা হয়। এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো—একজন কর্মকর্তার অভিজ্ঞতাকে বিভিন্ন জেলায় কাজে লাগানো এবং প্রশাসনিক দক্ষতা আরও সমৃদ্ধ করা।
নতুন ডিসিরা যেসব জেলায় দায়িত্ব নিচ্ছেন, সেসব জেলার উন্নয়ন অগ্রগতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জনসেবা প্রদানে নতুন গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে তার দায়িত্ব হবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন ও পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়া।
পটুয়াখালীতে দায়িত্ব পালন শেষে কুষ্টিয়ায় যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। কুষ্টিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক জেলা, যেখানে আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি শিক্ষা ও কৃষি উন্নয়নের মতো খাতগুলোতে নতুন ডিসির বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকবে।
মেহেরপুর থেকে কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন সিফাত মেহনাজ। সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে নদী ভাঙন, বন্যা ও দারিদ্র্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এসব সমস্যা মোকাবেলায় কাজে লাগবে বলে আশা স্থানীয়দের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কাজ করা ড. ছালামকে পাঠানো হয়েছে মেহেরপুরে। ঐতিহাসিক এই জেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা সমন্বয় তার বড় দায়িত্ব হবে।
ভূমি প্রশাসনে অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা নেত্রকোনায় নতুন দায়িত্ব পেলেন। নেত্রকোনা একটি কৃষি ও হাওর প্রধান জেলা। কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন তার মূল চ্যালেঞ্জ হবে।
কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় যাচ্ছেন তিনি। খুলনা একটি শিল্পসমৃদ্ধ বন্দরনগরী। এখানকার চ্যালেঞ্জ হলো শিল্পোন্নয়ন, শ্রমিক কল্যাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় ডিসি পরিবর্তনকে অত্যন্ত কৌশলগতভাবে দেখা হয়। কারণ একজন ডিসি একইসঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ফলে তিনি সরকারের নীতি বাস্তবায়ন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি, দুর্যোগ মোকাবেলা ও জনসেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন।
রদবদলের মাধ্যমে একজন কর্মকর্তা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং নতুন জেলার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। এতে প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
প্রতিটি জেলায় সাধারণ মানুষ চান নতুন ডিসিরা যেন সেবা প্রদানে আরও গতিশীল হন। দুর্নীতি দমন, সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনসাধারণের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করাই তাদের মূল প্রত্যাশা।
বিশেষ করে পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম ও নেত্রকোনার মতো জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দারিদ্র্য বড় সমস্যা। স্থানীয়রা আশা করছেন, নতুন ডিসিদের নেতৃত্বে এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রশাসনিক রদবদলকে অনেকেই সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেও ব্যাখ্যা করেন। কারণ জেলা পর্যায়ে প্রশাসন শক্তিশালী হলে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়।
অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সময়ে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা ভোটকেন্দ্র, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা রাখেন।
পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোনা ও খুলনায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রশাসনে নতুন গতি সঞ্চার করতে চায়। নতুন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন এবং জেলার উন্নয়ন ও জনকল্যাণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন—এমনটাই আশা সাধারণ মানুষের।