ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে আয়োজিত অংশীজন সংলাপে তিনি এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখনও প্রতিদিন নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঘটছে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো ইতিহাসের সঠিক পথে দাঁড়িয়ে জাতিগত নিধন বন্ধ করা।”
সাত দফা প্রস্তাবের মূল দিকসমূহ
১. স্বেচ্ছায় নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন: রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে দ্রুত একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
২. অব্যাহত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: জীবন রক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিশ্রুতি ও টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ।
৩. নিপীড়ন বন্ধ: মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার দাবি।
৪. সংলাপের প্ল্যাটফর্ম: মিয়ানমারের ভেতরে সহিংসতা ও জাতিগত নিপীড়ন বন্ধে সংলাপভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন।
৫. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা: বিশেষ করে আসিয়ানের সহায়তায় রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি।
৬. জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চারতা: আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীজনদের আরও জোরালো প্রতিবাদ।
৭. ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা: গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও মিয়ানমারে। সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের সোচ্চারতা রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আশা জাগাতে পারে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ মানবিক কারণে সীমান্ত উন্মুক্ত রেখেছে। বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে; এর ফলে কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর এখানে প্রায় ২২ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সমাজে বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।”
অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা ও অংশীজনদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “টেকসই সমাধান না আসা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুকে বৈশ্বিক এজেন্ডায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে এই বোঝা বহন সম্ভব নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে।”