ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
গাজায় দুর্ভিক্ষ আর কোনো সতর্কবার্তা নয়; এটি এখন ভয়াবহ এক বাস্তবতা। ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধে মানবসৃষ্ট অনাহারে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সন্তানদের চোখের সামনে মারা যেতে দেখছেন বাবা-মা, অথচ অসহায়ত্ব ছাড়া তাদের হাতে আর কিছুই নেই।
১২ বছর বয়সী হুদা আবু নাজাও তাদের মধ্যে একজন, যে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। তার মা সোমিয়া জানান, “নাসের হাসপাতালে চোখের সামনে পাঁচ শিশুর মৃত্যু দেখেছি। এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে তাঁবুতে ফিরে এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মেয়ে মার্চ মাস থেকে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। টানা তিন মাস হাসপাতালে থাকার পরও কোনো উন্নতি হয়নি। তার ওজন ৩৫ কেজি থেকে কমে এখন ২০ কেজিতে নেমে এসেছে।”
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের কারণে কয়েক মাস ধরে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না। এর ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত অনাহারে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, যার মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি শিশু।
আল জাজিরার সাংবাদিক ইব্রাহিম আল-খালিলি ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-এর খালি গুদাম থেকে জানাচ্ছেন, সব ধরনের সরবরাহ এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। অথচ ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, তাদের খাদ্য ও ওষুধভর্তি ৬ হাজার ট্রাক গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গাজায় গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। ‘অনাহার বন্ধ করো, গণহত্যা বন্ধ করো’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সিডনি, মেলবোর্নসহ বড় শহরগুলো।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, দ্বিমুখী অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনকে দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার দাবি জানান। প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, দেশজুড়ে ৪০টিরও বেশি শহরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ এই সমাবেশে অংশ নেন।
শনিবার রাত থেকে রোববার দিনভর গাজার পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে নির্বিচারে বিমান ও ট্যাঙ্ক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ভবন ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া সাহায্য নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১৯ জন।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধ ও হামলায় গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬৮৬ জনে।
অন্যদিকে, গাজায় আটক জিম্মিদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরায়েলের ভেতরেও আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এবং কৃষি ও পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রী অ্যাভি দিচতার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জিম্মিদের স্বজনরা।