ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
৫ আগস্টের পর নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শক্তিশালী সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। দীর্ঘ সময় আড়ালে থাকার পর সংগঠনটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাকসু) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে বিতর্ক এড়াতে শিবির নিজেদের নাম ব্যবহার না করে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ভিন্ন নামে প্যানেল দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিবির অংশ নিচ্ছে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ ব্যানারে। আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতি মৌখিকভাবে নিষিদ্ধ থাকায় শিবিরের অনেক নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্যানেলে নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীও রাখা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হলে শিবির অংশ নিচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ইনক্লুসিভ প্ল্যাটফর্ম’ নামে। এখানে নানা সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রার্থী অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। যদিও জ্যেষ্ঠ নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যায় পড়েছে শিবির।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে শিবির সরাসরি নিজেদের নামে অংশ নিচ্ছে না। এখানে নারী, অমুসলিম ও আদিবাসী প্রার্থীদের নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করছে তারা। প্যানেলে অন্তত ছয়জন নারী প্রার্থী থাকবে বলেও জানা গেছে।
শিবিরের বিপুল নেতাকর্মী থাকার দাবি করা হলেও, সংগঠনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য তালিকা প্রকাশ করেনি। শিক্ষার্থীদের একাংশের মতে, পরিচয় প্রকাশ করলে শিবির নিয়ন্ত্রিত সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে তাদের প্রভাব কমে যাবে। অন্যদিকে সমালোচকদের দাবি, বাস্তবে সংগঠনটির এত সদস্য নেই; প্রচারণার জন্য কৌশলগতভাবে ‘হাইপ’ তৈরি করা হচ্ছে।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ছাত্রশিবির মূলত জামায়াতে ইসলামী-ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠন। আশির দশকে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার করলেও, পরবর্তী সময়ে সহিংসতার কারণে নিষিদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও গুম-নিপীড়নের শিকার হয়। ২০২৪ সালের ১ আগস্ট শিবিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংগঠনটি আবার প্রকাশ্যে আসে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন—
“আমরা সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি সম্মিলিত প্যানেল ঘোষণা করেছি। আশা করছি শিবিরের প্যানেল জয়ী হবে।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জানান—
“আমাদের অনেক পরিচিত মুখ ছাত্রত্ব হারানোয় অংশ নিতে পারছে না। তবে নিয়ম মেনেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। ফল যাই হোক, আমরা মেনে নেব।”
জাহাঙ্গীরনগর শিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন—
“এবার দলীয় নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল দেওয়া হবে।”
ছাত্রদল, ছাত্রলীগসহ প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, শিবির এখনো ‘গুপ্ত রাজনীতি’ করছে। কারা সংগঠনের আসল নেতাকর্মী তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার ক্যাম্পাসে সরব হয়ে উঠলেও নিজেদের পরিচয় আড়াল রেখে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন নামে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের বড় অংশ বলছে, এটি শিবিরের কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে সংগঠনের প্রকৃত শক্তি আড়ালে রাখা যায়।