ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
মিয়ানমারকেন্দ্রিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির একজন সশস্ত্র যোদ্ধা কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় ওই যোদ্ধাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। সীমান্ত বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘটনাটি রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ও সশস্ত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সংকটের ইঙ্গিত দিতে পারে।
বিজিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে উখিয়ার বালুখালী বিওপির ৫ নম্বর পোস্টে আরাকান আর্মির সদস্য জীবন তঞ্চংগ্যা (২১) আত্মসমর্পণ করেন। তাঁর কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, ৫২ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জীবন জানান, তাঁর বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গর্জবুনিয়া গ্রামে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা শঙ্কায় মিয়ানমারের মংডু ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছেন। তিনি দাবি করেন, আরও প্রায় ৩০০ আরাকান আর্মি সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছেন।
বিজিবি ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, আত্মসমর্পণকারীকে এবং তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। জীবন জানিয়েছেন, নিরাপত্তা শঙ্কা ছাড়াও সংগঠনে যোগদানের পেছনের ‘মোটিভেশন’ নিয়ে হতাশা থেকেই তিনি সরে এসেছেন।
উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসেন বলেন, অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার জীবনকে হেফাজতে এনে তাঁর যোগসূত্র ও নেপথ্যের পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সীমান্ত সূত্রগুলো জানায়, গত বছর ডিসেম্বরে রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছিল আরাকান আর্মি। পরবর্তীতে স্বাধীন ‘আরাকান রাষ্ট্র’ ঘোষণা করার পরিকল্পনা থাকলেও জান্তা বাহিনীর হামলা ও নানা সংকটে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে গত এক বছরে ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি।
সম্প্রতি রাখাইনে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা বেড়েছে। ‘দ্য ইরাবতী’ সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ২ মে থেকে দুই সপ্তাহের অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে আরাকান আর্মির ভেতরে মনোবল হ্রাস, অর্থ ও খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে। এছাড়া আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) ও জান্তা বাহিনীর ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় আরাকান আর্মি চাপে পড়েছে। সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালানের মাধ্যমে অর্থ জোগাড়ের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নীতিতেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন জান্তা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে এবং নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে কিছু সামরিক ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে আগ্রহী।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগত পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে রাখাইন ও সীমান্ত পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, তবে এখনই আরাকান আর্মি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে—এমন বলা যাবে না।