ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
প্রকাশকাল: ৫ আগস্ট ২০২৫, সকাল ১০:৫৩
আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট—এক বছর আগে এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে রচিত হয়েছিল এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে পতন ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচারী সরকারের। পালিয়ে যান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিবও। ‘বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও’ নামক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় এদিনই।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে শুরু হওয়া আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় দেশব্যাপী গণআন্দোলনে। ৫ আগস্টের সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় ছায়া সুনসান অবস্থা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঢাকার রাজপথে নেমে আসে মানুষের ঢল। দুপুর নাগাদ তা রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
শুধু ছাত্র নয়—মায়েরা, যাঁরা এতদিন সন্তানের নিরাপত্তায় ভীত ছিলেন; বাবারা, যাঁরা ফিরিয়ে রাখতেন সন্তানদের ঘরে; শহীদদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সাধারণ চাকুরিজীবী, দোকানদার, শিক্ষক-শিক্ষিকা—সবাই মিলে তৈরি করেন এক অপ্রতিরোধ্য জনতার ঢেউ।
‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলে যিনি বলেছিলেন, তিনিই পালালেন
জনস্রোতের চাপে বিকেলের আগেই গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রথমে এমআই‑১৭ হেলিকপ্টারে করে রওনা দেন বঙ্গবন্ধু বিমানঘাঁটিতে। পরে সি১৩০ জুলিয়েট হারকিউলিস বিমানে ওঠে ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্দোন বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নেন।
বিকাল ৩টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নিশ্চিত করেন, দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গোটা বাংলাদেশে শুরু হয় বিজয়ের উল্লাস।
ঢাকার গণভবন, সংসদ ভবন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও পরিণত হয় জনতার দখলে। কেউ ছাদে উঠে আনন্দে চিৎকার করে, কেউ দেয়ালে লিখে রাখে ‘কোটা সংস্কার চাই’ শ্লোগান। কেউ আবার আবেগে কেঁদে ফেলে বা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে।
বিজয়ের আনন্দে ভাসতে থাকা এদিনও যাত্রাবাড়ি ও আশুলিয়ায় ঘটে যায় বিভীষিকাময় হামলা। যাত্রাবাড়ি পুলিশ স্টেশনের সামনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ৫৫ জন। একইদিন আশুলিয়ায় পুড়িয়ে মারা হয় আরও ছয়জনকে।
ক্ষোভে ফেটে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েকটি থানা, সরকারি স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব নেয় সামরিক বাহিনী। সেনাপ্রধান জানান, গঠন হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিকেলে সেনানিবাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেন সেনাপ্রধান, ছাত্র আন্দোলনের নেতা এবং বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা।
এই দিনেই শেষ হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ৩৬ দিনের আন্দোলন। ১ জুলাই শুরু হওয়া এই গণজাগরণ পরিণত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে।
যারা ৭১ দেখেনি, তারাই সৃষ্টি করে নতুন এক ইতিহাস—একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায্য অধিকার ও বৈষম্যহীনতা হবে রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ।