ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন টিকিট ও হোটেল বুকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্ট হঠাৎ করেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ গতকাল শনিবার পর্যন্ত সচল থাকলেও বর্তমানে সব ধরনের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে স্থগিত রয়েছে। এদিকে, প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম স্বপরিবারে দেশ ছেড়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম সম্প্রতি হঠাৎ করেই আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে বিদেশে পাড়ি জমান। এ নিয়ে তিনি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি মেসেজ দিয়ে তাঁর বিদেশে অবস্থানের কথা জানান।
ফ্লাইট এক্সপার্টের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট, যিনি মক্কা গ্রুপেরও চেয়ারম্যান এবং সাইমের বাবা, তিনিও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের ভাষ্যমতে, ফ্লাইট এক্সপার্টের কাছে গ্রাহকদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি অগ্রিম অর্থ রয়েছে, যেগুলোর কোনো সেবা এখন পর্যন্ত প্রদান করা হয়নি। গ্রাহকরা হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের খবর পেয়ে শনিবার বিকেল থেকে মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানির শত শত ক্ষুব্ধ প্রতিনিধি।
‘অবকাশ অপারেশন্স’ ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক বদরুল হক বলেন, “আমরা প্রায় ৫০ লাখ টাকার টিকিট বুকিং দিয়েছি। এখন শুনি প্রতিষ্ঠানটাই বন্ধ! এটা কি ধোঁকা নয়?”
এদিকে ‘প্যান প্যাসিফিক ট্রাভেলস’-এর ফাইয়াজ মাহমুদ জানান, “আমাদের প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকার বুকিং করেছে। এখন সেই টাকা কোথায়, আমরা জানি না!”
ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা –
সাঈদ আহমেদ (কর্মী)
এস এম সাদাত হোসেন (চিফ অপারেশন অফিসার)
আব্দুল গনি মেহেদী (চিফ মার্কেটিং অফিসার)
মো. সাকিব হোসাইন (হেড অব ফিন্যান্স)
জুবায়ের হাসান (হেড অব ভিসা)
গতকাল মতিঝিল থানায় ফ্লাইট এক্সপার্টের সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সাইমের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে তারা উল্লেখ করেন, “গত শুক্রবার রাতে প্রতিষ্ঠানের কাউকে কিছু না জানিয়ে এমডি সাইম দেশ ত্যাগ করেন। পরে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানান।” তারা আরও বলেন, “তার পলায়নের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বহু সাপ্লায়ার ও গ্রাহকের অর্থ ঝুঁকিতে পড়েছে। গ্রাহকরা এখন আমাদের হুমকি দিচ্ছেন, যা আমাদের জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে।”
একসময় বাংলাদেশের ডিজিটাল ভ্রমণ সেবার পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত ছিল ফ্লাইট এক্সপার্ট। দেশ-বিদেশের বিমান টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন এবং ট্যুর প্যাকেজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান নিয়ে অভিযোগের অন্ত ছিল না। অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে টিকিট বা হোটেল বুকিংয়ের সেবা না পাওয়ার অভিযোগ জানান, এবং টাকা ফেরতের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।