ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
গত বছরের আলোচিত ‘জুলাই আন্দোলন’-এর প্রভাব এখনও কাটেনি দেশের সংস্কৃতি ও বিনোদন অঙ্গনে। সেই আন্দোলনের রেশ ধরে আবারও নতুন করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ও সোহানা সাবা। সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল দ্বন্দ্ব ঘিরে দুই তারকার মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তাপ নেটদুনিয়ায় ঝড় তুলেছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, এই দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছে সেই ‘জুলাই আন্দোলন’-কে ঘিরে পুরোনো মতপার্থক্য।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে সরব ছিলেন বাঁধন। আন্দোলনের পক্ষে কথা বলায় সে সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নানা ট্রল ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অন্যদিকে, সেই সময় আলোচিত হন সোহানা সাবা। তার নাম উঠে আসে তৎকালীন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সমন্বয়ে গঠিত আলোচিত ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সঙ্গে। এ নিয়ে দুজনকে ঘিরে নেটপাড়ায় তৈরি হয় মতবিরোধ ও বিভক্তি।
সাম্প্রতিক এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে গেল বৃহস্পতিবার। বাঁধনের একটি ফেসবুক পোস্টে একজন নারীর করা ব্যক্তিগত ও অপমানজনক মন্তব্যের স্ক্রিনশট নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করেন সোহানা সাবা। পোস্টে সাবা লেখেন,
> “এই কমেন্টটা আপু ডিলিট করে দিয়েছেন… হয়তো দিদিটিকে ব্লকও করেছেন… ভাগ্যক্রমে আমার টাইমলাইনে ভেসে উঠেছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিলাম।”
স্ক্রিনশটে থাকা মন্তব্যে বাঁধনকে উদ্দেশ করে বলা হয়:
“সারা জীবন ড্রামাবাজি করে সতী সাজতে চেয়েছেন… আপনি আপাদমস্তক একজন ভণ্ড। আপনার পুরো জগৎটা ঘোরে আপনাকে ঘিরেই। করুণা লাগে আপনাকে দেখে। কেউ যদি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হতেন, তাহলে কলকাতায় গিয়ে ব্যক্তিজীবনের কেচ্ছা গাইতেন না।”
পরে মন্তব্য ঘরে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাবা লিখেন:
> “প্রথমে ভেবেছিলাম স্ক্রিনশট নিয়ে কিছু পোস্ট করব না। কিন্তু পরে মনে হল এটা তো পাবলিক পোস্ট, যে কেউ নিতে পারে, শেয়ারও করতে পারে। তাই আমিও করলাম।”
এই পোস্টকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাঁধন-ভক্তদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। পরে বাঁধন তার ফেসবুক টাইমলাইনে একটি দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া জানান, যেখানে নাম উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিত স্পষ্ট ছিল। তিনি লেখেন—
> “আমার কিছু সহকর্মী— যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি, মঞ্চে দাঁড়িয়েছি, যাদের বিশ্বাস করতাম— তারা ইন্টারনেটে আমার ওপর নির্মম ও অপমানজনক আক্রমণ চালাচ্ছেন। তাদের কথাগুলো ছিল অমানবিক, উদ্দেশ্য ছিল আমাকে ছোট করা। তারা শুধু আমাকে নয়, আমি যা কিছুতে বিশ্বাস করি, সেগুলোকেও অসম্মান করছে। এই তালিকায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্তরাও আছেন।”
বাঁধনের এই লেখায় সরাসরি কারও নাম না থাকলেও অনেকেই মনে করছেন, এটি সোহানা সাবাকে উদ্দেশ করেই লেখা। ফলে দুই তারকার এই ভার্চুয়াল লড়াই এখন শুধু বিনোদন অঙ্গনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ দর্শক ও অনুরাগীদের মাঝেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো— দেশের বিনোদন শিল্পে রাজনৈতিক ও আদর্শিক মতপার্থক্য এখন আর গোপন কিছু নয়। নেটদুনিয়ার আলোচনায় যেমন উঠে আসছে তারকাদের ব্যক্তিগত রেষারেষি, তেমনি কেউ কেউ মনে করছেন, এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন।
সব মিলিয়ে, বাঁধন ও সাবার এই বিতর্কে ফের সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের বিনোদন অঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কে কার পক্ষে, কে বিপক্ষে— তা নিয়ে শুরু হয়েছে পক্ষ-বিপক্ষ বিশ্লেষণ। আর এরই মধ্যে পুরোনো ‘জুলাই আন্দোলন’ নতুন করে ফিরে এসেছে আলোচনার কেন্দ্রে।