ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
ওয়াশিংটন, ৩০ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে শুরু হওয়া তৃতীয় দফার আলোচনার প্রথম দিনেই সবুজ সংকেত পেয়েছে বাংলাদেশ। আলোচনার অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, পাল্টা শুল্ক হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে বলে তারা আশাবাদী।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় সমকালকে তিনি বলেন, “এজেন্ডা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি। আমাদের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানো হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।”
তবে ঠিক কত শতাংশ শুল্ক কমানো হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, “আজ ও আগামীকালও বৈঠক রয়েছে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক কিছু হবে।”
তিন দিনব্যাপী এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)। স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রথম দিনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টায় শেষ হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তার সঙ্গে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে অংশ নিয়েছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনা পরিচালনা করছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। তার নেতৃত্বে রয়েছেন বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ২ এপ্রিল বাংলাদেশের পাশাপাশি ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ৯ এপ্রিল এই সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়, তবে ৮ জুলাই নতুন করে আবারও বাংলাদেশের জন্য ৩৫ শতাংশ হার চূড়ান্ত করে জানানো হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যে গড়ে ২২ থেকে ২৩ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির পর এই হার আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশ সরকার পাল্টা শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, আলোচনার আগে গত ২৩ জুলাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত অবস্থানপত্র পাঠানো হয়েছে। তিন দিনের আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বিষয়ে চুক্তি হতে পারে।
তিনি বলেন, “ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ১২৩ বিলিয়ন ডলার, তবুও তারা পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার চুক্তি করেছে। তুলনায় বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ছয় বিলিয়ন ডলার, যা আগামী এক থেকে দেড় বছরে অনেকটাই কমে যাবে। আমদানিও বাড়বে অন্তত দেড় বিলিয়ন ডলার।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, “যতদূর আভাস পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক হার রাখতে পারে। আগের মতো আর ততটা কঠোর অবস্থানে নেই তারা।”
উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৫ শতাংশ হারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সমঝোতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশও ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি, পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর সাত লাখ টন গম আমদানির এমওইউ, এবং সয়াবিন, এলএনজি, তুলা ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত।
তৃতীয় দফার এই আলোচনা সফল হলে, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।