বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল সময় টিভির সম্প্রচার সাত দিনের জন্য বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত ১৪ আগস্ট সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এ মামলায় সিটি গ্রুপের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করীম এবং আহমেদ জোবায়েরের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ছিলেন।
রিটকারী শম্পা রহমানের আইনজীবী আহসানুল করিম জানান, সময় টিভির ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা শম্পা রহমানের ছিল। তবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতাদের খুশি করার জন্য সাবেক মন্ত্রী ও তাঁর ভাগ্নের নামে বেশি শেয়ার দেখানো হয়েছিল। এছাড়াও, কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় এক ক্যামেরা পারসনের উস্কানিতে পুলিশ গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল সময় টিভির কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী এবং সময় টিভির সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকরা আহমেদ জোবায়েরের পদত্যাগসহ ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়, যার ধারাবাহিকতায় এ মামলার আদেশ আসে।
অপরদিকে, ১০ আগস্ট গুলশানের সিটি হাউসে সময় মিডিয়া লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্ধারণ করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও পদ থেকে আহমেদ জোবায়েরকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং পরিচালক শম্পা রহমানকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আহমেদ জোবায়ের এ অপসারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আজ সাত দিনের জন্য সময় টিভির সম্প্রচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা সময় টেলিভিশন পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শেষে ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল বাণিজ্যিক সম্প্রচারে আসে। শুরু থেকেই মালিকানা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা ও বিরোধের মধ্যে দিয়ে সময় টিভি পরিচালিত হয়ে আসছিল।
দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সিটি গ্রুপ পরবর্তীতে সময় টিভিতে ৬৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৭৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। তবে ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ আহমেদ জোবায়েরের মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের পরিবারের হাতে থেকে যায়।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা সময় টিভিসহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া কার্যালয়ে হামলা চালায়। ফলে কিছু সময়ের জন্য সময় টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। পরে মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে এবং এ নিয়ে চলমান আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজকের আদেশটি আসে।