ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর আলোচনায় কৌশলগত সুবিধা আদায়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছে বাংলাদেশ। এ তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
রোববার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ চুক্তিতে সুবিধা পেতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার ছিল, এখন সেটি বাড়িয়ে ২৫টি করা হয়েছে।”
বাণিজ্য সচিব জানান, “বোয়িং কোম্পানি সরাসরি মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠান না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এটি। ভারত, ভিয়েতনাম ১০০টি করে এবং ইন্দোনেশিয়া ৫০টি বোয়িং অর্ডার দিয়েছে। আমরা তুলনামূলকভাবে কম দিলেও বার্তাটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ কিছু বোয়িং পেতে পারে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের বহর বাড়ানো এবং জাতীয় হ্যাঙ্গারের প্রযুক্তিগত নির্ভরতার বিষয়টিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভূমিকা রেখেছে। “আমাদের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার, হ্যাঙ্গার — সবই বোয়িং নির্ভর। তাই বোয়িং কেনা বাধ্যতামূলক।”
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ চুক্তির খসড়া নিয়ে দুই দফায় ওয়াশিংটনে এবং বেশ কয়েকবার অনলাইন বৈঠক হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে ২৩ জুলাই বাংলাদেশ চূড়ান্ত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR) অফিসকে।
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার ও বুধবার (২৯ ও ৩০ জুলাই) ওয়াশিংটনে ইউএসটিআর-এর অফিসে সরাসরি বৈঠক হবে। আমাদের প্রতিনিধি দলে থাকবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও আমি নিজে। ৩১ জুলাইও একটি বৈঠক হতে পারে। আশা করছি, ১ আগস্টের মধ্যেই এই আলোচনার চূড়ান্ত ফল আসবে।”
সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি দামে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এছাড়া বেসরকারি খাত সয়াবিন ও তুলা আমদানির বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, “রেড সি অঞ্চলে অস্থিরতার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ওপর নির্ভরতা বাড়ানো রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই প্রয়োজন। চীন, রাশিয়া বা ইউক্রেনের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো আমাদের জন্য ইতিবাচক।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা মনে করি না, আমাদের ওপর ভারতের চেয়ে বেশি শুল্ক চাপাবে যুক্তরাষ্ট্র। বরং প্রতিযোগীদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সুবিধা আমরা পাবো বলেই প্রত্যাশা করছি।”
মাহবুবুর রহমান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে বিনিয়োগ ইস্যু থাকলেও সেটি মুখ্য নয়। তাদের মূল লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি খাতে বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি হয়, যার বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আসতে পারে।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে বছরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনে। তাদের কাছ থেকে আমদানিও বাড়ানো উচিত। এই সম্পর্কের ভারসাম্য রাখার জন্যই আমরা কাজ করছি।”