ডেস্ক রিপোর্ট, সকলের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সরকারের ৯ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনায় আশার আলো দেখছেন ভারতীয় চাল রপ্তানিকারক ও মিল মালিকরা। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন রপ্তানি খাতেও প্রভাব ফেলেছিল। তবে সাম্প্রতিক এই আমদানি পরিকল্পনাকে ঘিরে সম্পর্কের বরফ গলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট জানিয়েছে, ভারতের চাল রপ্তানি শিল্প সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তে তাদের পক্ষে নতুন করে চাহিদা ও ভালো দামের সুযোগ তৈরি হবে। উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্বের মোট চাল রপ্তানির প্রায় ৪৬ শতাংশই সরবরাহ করে ভারত। বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় জোগান ও মূল্য—উভয় দিক থেকেই ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
রপ্তানিকারকদের দাবি, বাংলাদেশ ৪ লাখ টন চাল আমদানি করবে সরাসরি সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে এবং বাকি ৫ লাখ টন আমদানি করবে বেসরকারি পর্যায়ে। আমন মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সম্ভাব্য ফসলহানির শঙ্কায় সময়ের আগেই এই আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ভারতের রাইসভিলা ফুডস-এর প্রধান নির্বাহী সুরজ আগরওয়াল বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘সরকারি দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ টন এবং বেসরকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ৫ লাখ টন চাল বাংলাদেশে রপ্তানি হতে পারে। আমন ধানের ক্ষতির আশঙ্কা মাথায় রেখে বাংলাদেশ আগেভাগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে, জয় বাবা বাকেশ্বর রাইস মিল-এর পরিচালক রাহুল আগরওয়াল জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের চাল মিলগুলো ইতোমধ্যেই এই আমদানি পরিকল্পনা থেকে লাভবান হওয়ার জন্য প্রস্তুত। সীমান্তে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও তিনি এতে কূটনৈতিক কোনো জটিলতা দেখছেন না।
রাহুল আগরওয়ালের মতে, ‘বেসরকারি আমদানির ৩০-৪০ শতাংশ চাল পশ্চিমবঙ্গের মিল থেকে সরবরাহ হতে পারে। একইসঙ্গে সরকারি দরপত্রেও অংশগ্রহণ করবে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও অন্ধ্রপ্রদেশের মিলগুলো।’
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ ও দক্ষিণ ভারতে জনপ্রিয় কিছু চালের জাত—যেমন স্বর্ণা, রত্না, মিনিকেট ও সোনা মসুরি—এখন চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বাড়তি দামের সুবিধা পেতে পারে। বর্তমানে প্রতি কেজি সেদ্ধ ‘স্বর্ণা মসুরি’ চাল ২৯ টাকায় বিক্রি হলেও তা বেড়ে ৩১-৩২ টাকা হতে পারে। একইভাবে, ৪১-৪২ টাকা দরের মিনিকেট চালের দাম বাড়তে পারে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের আগাম চাল আমদানির এই পরিকল্পনা মূলত ‘আমন মৌসুমে সম্ভাব্য বন্যা ও খাদ্য সংকট মোকাবিলায় একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ।’
এদিকে, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১৪ লাখ টন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩.৭৬ লাখ টন বোরো ধান এবং ৯.৫ লাখ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করেছে। এই সংগ্রহ কার্যক্রম আগস্টের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী মাস থেকে বাংলাদেশে ৫৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল ১৫ টাকা কেজি দরে সরবরাহের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রস্তুতি চলছে।
চাল রপ্তানির জন্য ভারতের প্রধান দুটি বন্দর—বিশাখাপত্তম ও পারাদীপ—এই কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের ফলে ভারতের চাল রপ্তানিতে নতুন গতি আসবে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারেও নিম্ন ও মাঝারি মানের চালের দাম স্থিতিশীল থাকবে।