ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের প্রাচীন তীর্থস্থান ধর্মস্থালা এক ভয়াবহ অভিযোগের মুখে। প্রায় আট শতাব্দীর ইতিহাসসমৃদ্ধ এই ধর্মীয় নগরীতে এক সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে উত্তাল বিতর্ক। তিনি দাবি করেছেন, দীর্ঘ ১৯ বছরে শতাধিক নারী ও শিশুকে নির্যাতনের পর হত্যা করে মন্দির চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ জুলাই দায়ের হওয়া এই অভিযোগের পর ভারতের ধর্মীয় মহলসহ সাধারণ মানুষ, মিডিয়া এবং প্রশাসনের মধ্যে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল যে, ব্যাঙ্গালুরুর একটি আদালত ৮ হাজার ৮০০-এর বেশি অনলাইন কনটেন্ট, ইউটিউব ভিডিও ও ফেসবুক পোস্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সংবাদ প্রচারেও—যা নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি নিজেকে ধর্মস্থালার পরিচ্ছন্নতাকর্মী দাবি করে জানান, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে তিনি প্রভাবশালীদের নির্দেশে বহু নারী ও শিশুর মরদেহ কবর দিয়েছেন মন্দির এলাকার ভেতরে। তার ভাষ্যে, মরদেহগুলোর শরীরে ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন। তদন্তকারীদের দাবি, ইতোমধ্যেই কয়েকটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে এবং আদালতে দেওয়া জবানবন্দি পর্বও সম্পন্ন হয়েছে।
অভিযোগের পর পরই কর্ণাটক রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যেই আদালতের নির্দেশে হাজার হাজার পোস্ট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি ইউটিউব চ্যানেল ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে।
ঘটনার জের ধরে ২০০৩ সালে নিখোঁজ হওয়া এক শিক্ষার্থীর পরিবার নতুন করে বিষয়টির তদন্ত দাবি করেছে। আইনজীবী উমাপাথি এস জানিয়েছেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এখানে গণধর্ষণ, গণহত্যা ও গণকবরের মতো ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের উচিত ছিল একজন অভিজ্ঞ আইপিএস কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত পরিচালনা করা।”
অন্যদিকে, মন্দির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা স্বচ্ছ তদন্ত চায় এবং সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থেই কাজ করতে প্রস্তুত।
অভিযোগকারী ব্যক্তি জানান, তিনি ২০১৪ সালে পরিবারসহ ধর্মস্থালা ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তার বিবেকের দংশন থেকেই এই জবানবন্দি দিচ্ছেন।