রিপোর্ট:
২০২৪ সালের ২১ জুলাই—বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। দীর্ঘ ২১ দিনের ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ কোটা সংস্কার বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয়। সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হবে বলে নির্দেশনা দেন আদালত। রায়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি পূরণ হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং সরকার একইদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়ে দেয় চলমান কারফিউয়ের সময়সীমা।
রায়ের দিন সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশ ছিল একেবারেই স্তব্ধ। ২০ জুলাইয়ের পর নতুন করে সংঘর্ষ না ঘটলেও, রাজপথে এখনও ছড়িয়ে ছিল সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন। রাজধানী ঢাকা যেন এক ভুতুড়ে নগরীতে রূপ নেয়—যেখানে মানুষ নেই, কেবল সেনা, নৌ ও কোস্টগার্ড সদস্যদের টহল।
কারফিউর কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগেও বিঘ্ন ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো বন্ধ হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তানজিনা তাম্মিম হাপসা জানান, “আমি নীলক্ষেত পর্যন্ত হেঁটে যেতাম, যদি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের কাছ থেকেই কিছু আপডেট পাওয়া যেত।”
সরকারি পর্যায় থেকে তখন দাবি করা হচ্ছিল, আন্দোলন শেষ—মাঠে যাঁরা আছেন, তাঁরা ‘দুষ্কৃতকারী’। আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগ তোলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকারও শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলে জনমত গঠনের চেষ্টা। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন।
এই দিনই তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। সরকারের লক্ষ্য ছিল, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরা এবং চলমান অস্থিরতা দমন করা।
ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে লড়াই হয়েছিল, আপিল বিভাগের রায় তাকে বৈধতা দেয়। আদালত নির্দেশনা দেন, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। রায়কে স্বাগত জানান সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী ও সচিবরা।
তবে আদালতের রায় সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতা তখনও ছিল চরম অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। কারফিউ, সেনা মোতায়েন ও তল্লাশি—সবকিছু মিলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে স্থবির।