ডেস্ক রিপোর্ট | জুলাই ১৩, ২০২৫
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আসছে আরেকটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। ২০২৭ সাল থেকে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে চালু হতে যাচ্ছে নৈতিক, মানবিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে ১৬টি দেশের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে সরকার। তবে শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা বলছেন, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাতবার শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছিল ২০১২ সালে, যখন ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ চালু হয়। মুখস্থনির্ভরতা কমাতে নেওয়া সেই উদ্যোগের পাশাপাশি ২০২১ সালের শিক্ষাক্রমেও আনা হয় বড় পরিবর্তন। তবে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় বলে দাবি অনেকের। তীব্র আন্দোলনের মুখে তা বাতিলও করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর আবারো ২০১২ সালের সৃজনশীল কারিকুলাম ফিরিয়ে আনা হয়। তবে এবার ২০২৭ সাল থেকে নতুন কাঠামো চালুর পরিকল্পনায় কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
—
অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন—বিভিন্ন দেশের শিক্ষা কাঠামো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া: অঞ্চলভেদে ভিন্ন শিখন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। শ্রেণীকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর।
যুক্তরাষ্ট্র: স্কুলভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি। অনুসন্ধান ও দক্ষতাভিত্তিক মূল্যায়ন জনপ্রিয়।
ফিনল্যান্ড: বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা জীবনঘনিষ্ঠ ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক। দ্বাদশ শ্রেণীতে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা।
চীন: ভাষা, গণিত, কারিগরি ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর। দলগত কাজ, সমালোচনামূলক চিন্তা ও উদ্ভাবনী শিক্ষার ওপর ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
—
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব উন্নত দেশের শিক্ষাক্রম চালু করার মতো বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো নেই।
এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মদ জাইর আল ফারুকী বলেন,
> “স্কুলের পরিবেশ ও ক্লাসরুমের চর্চায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা ও নিষ্ঠা বাড়াতে হবে।”
আরেকটি বড় বাধা রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব। এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী জানান,
> “রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন শিক্ষাক্রম কাঠামো তৈরি করা হবে, যেন পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলেও এটি টিকে থাকে।”
—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন,
> “কারিকুলাম পরিবর্তনের আগে সংবিধান সংশোধন বা কমপক্ষে সর্বদলীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। পুরাতন শিক্ষানীতির ভিত্তিতে নতুন কাঠামো টেকসই হবে না।”
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন,
> “সম্পূর্ণ আমূল পরিবর্তন এখনই সম্ভব না হলেও, একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে।”
—
সচেতন অভিভাবকরা চান নোটবই ও কোচিং বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে এমন পাঠদান পদ্ধতির অবসান। তাদের মতে, একটি সৃজনশীল ও জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের প্রকৃত সুফল মিলবে না।