ঢাকা, সোমবার: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদি স্বৈরশাসন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “দেশের দায়িত্ব এমন এক সময়ে নিয়েছি, যখন সর্বক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমে সংস্কারের পর অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করবে।”
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রথম ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের নবযাত্রায় বাংলাদেশের বন্ধু, অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।
প্রেস ব্রিফিং শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি কূটনীতিকদের পূর্ণ সমর্থন চেয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের বন্ধুদের মধ্যে থাকতে পেরে আমি আনন্দিত। দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছে। লাখো বীর ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল। কিন্তু তাঁর দলের ছাত্র সংগঠন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভয়াবহ গণহত্যার পর তিনি দেশ ছাড়েন।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমি সেই সমস্ত বীর ছাত্র এবং নিরীহ মানুষদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, যারা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের সাম্প্রতিক স্মৃতিতে অন্য কোনো দেশের ছাত্রদের তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য এত মূল্য দিতে হয়নি। তারা এমন একটি বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং পরিবেশবান্ধব দেশের স্বপ্ন দেখেছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেড় দশকের নির্মম নৃশংসতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে, তরুণ প্রজন্ম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ না পেয়েই বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করা হয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, “দেশ নিয়ে ছাত্রদের একটি স্বপ্ন আমাদের মুগ্ধ করেছে, যে স্বপ্ন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। ছাত্ররা এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখছে যেখানে মানুষ রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সশস্ত্র বাহিনী বেসামরিক শক্তির সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং সকল ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
জুলাই-আগস্ট মাসে আন্দোলনে নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ড. ইউনূস এবং তিনি চান এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমে সংস্কার করে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করব।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ একটি নতুন যাত্রার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সাহসী ছাত্র এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের স্থায়ী পরিবর্তন প্রয়োজন। যত তাড়াতাড়ি সেটি বাস্তবায়ন করা যায়, ততই ভালো। আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বন্ধুরা আমাদের পাশে থাকবে।”