ঢাকা, ২৯ এপ্রিল ২০২৫:
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছেন আরও ৬ লাখ ২৪ হাজার সুবিধাভোগী। একই সঙ্গে সব ধরনের ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে, যার ফলে ন্যূনতম ভাতা ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকায় উন্নীত হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দিয়েছেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাতে নতুন অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা করা হচ্ছে, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১৭ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বেশি।
আগামী অর্থবছরে নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার জন ভাতার আওতায় এলেও, চলতি অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার। অর্থাৎ, এবারের প্রস্তাবে সুবিধাভোগীর সংখ্যা কিছুটা কমলেও বরাদ্দ ও ভাতার পরিমাণ বেড়েছে।
অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী বাজেটে বয়স্ক ভাতা পাবেন ৬১ লাখ মানুষ, যা চলতি বছরের তুলনায় ৯৯ হাজার বেশি। বয়স্কদের ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হচ্ছে। এতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭৯১ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা আগের বাজেটে ছিল ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
বিধবা ভাতা কর্মসূচিতে এক লাখ ২৫ হাজার নতুন মুখ যুক্ত হবে, ফলে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৯ লাখ। এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ভাতার পরিমাণ একশ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে এবং উপকারভোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ৩৪ লাখ ৫০ হাজারে উন্নীত হচ্ছে। এ কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।
মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২০ জন, ফলে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা হবে ১৭ লাখ ৭১ হাজার ২০০ জন। তাদের ভাতা ৮৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, দেশে প্রায় ৩৩ লাখ যোগ্য বয়স্ক ও ২৫ লাখ বিধবা এখনো ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক এবং ৩৩ শতাংশ বিধবা ভাতা পাচ্ছেন অনুপযোগী হয়েও, যাদের জন্য প্রতিবছর সরকারের ব্যয় হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ সঠিকভাবে বরাদ্দ দিলে আরও ১৫ লাখ সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৮.৭ শতাংশ—অর্থাৎ ৩ কোটি ১৭ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। শহর ও গ্রামের মধ্যে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। শহরের দরিদ্রদের মাত্র ৫০ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় থাকলেও, গ্রামের ক্ষেত্রে এ হার ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল এক কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার জনের জন্য নগদ ভাতা হিসেবে। তবে দেখা গেছে, মাত্র ৫.৭৭ শতাংশ নন-ক্যাডার পেনশনভোগী সরকারি কর্মচারী পাচ্ছেন এই বরাদ্দের ৬৩.১৮ শতাংশ অর্থ। একইভাবে, দুই লাখ ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগদ খাতের প্রায় ১২ শতাংশ অর্থ।
বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা থাকলেও, সঠিক উপকারভোগী নির্বাচন নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক সময় প্রকৃত প্রাপক বাদ পড়ছেন কিংবা অযোগ্যরা ভাতা পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রতিবছর সংখ্যা বাড়ানো বাধ্যতামূলক নয়। বরং দেখতে হবে সুবিধাভোগী ব্যক্তি প্রকৃত প্রাপক কিনা।”