খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের অনশন ও আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছেন। উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ দাবিতে চলছে অনশন, বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি।
কুয়েট:
কুয়েটে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে গিয়ে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। অনশন ভাঙার আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এবং উপাচার্য পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। অনশনকালে হিট স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন সাদাত, যাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়:
জাবির শিক্ষার্থীরাও কুয়েট উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনশনে বসেছেন। আন্দোলনে শিক্ষকরা সংহতি জানিয়েছেন। বিকেল ৩টার মধ্যে দাবি না মানলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়:
খুবির শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ঢাকাগামী মহাসড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তারা জানান, কুয়েটের আন্দোলন শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, এটি দেশের উচ্চশিক্ষার পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি):
কুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা যশোর-চৌগাছা মহাসড়কে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে অংশ নিয়ে তাঁরা ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ও ‘ভিসি পদত্যাগ’ স্লোগানে মুখরিত হন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি):
ইবির শিক্ষার্থীরাও আজ বেলা ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনে বসেন। তাঁদের অভিযোগ, কুয়েট উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন করছেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি):
শেকৃবির শিক্ষার্থীরাও ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে অংশ নেন। আমবাগান এলাকায় অনশনে বসে তারা বলেন, কুয়েট ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
পটভূমি:
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। এরপর ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২১ এপ্রিল থেকে ৩২ শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন।
সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য পদত্যাগের একদফা দাবি জানিয়ে ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে অবস্থান নেন। আন্দোলন চলমান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী ২ মে থেকে হল ও ৪ মে থেকে ক্লাস চালুর ঘোষণা দিয়েছে।
উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে আন্দোলন আরও জোরদার হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।