ঢাকা, ২১ এপ্রিল: শ্রমিকদের সার্বজনীন অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইনকে সর্বজনীন করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা জোরদার করতে জাতীয়ভাবে একটি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় শ্রম সংস্কার কমিশন। পরে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ।
শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে রফতানি খাতের শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন পরিশোধের মতো অর্থ নিয়ে একটি জরুরি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং শিল্পে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে মনে করছে কমিশন।
প্রতিবেদনে শ্রম আইনের ভাষাগত সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের ‘মালিক’ হিসেবে নয়, ‘নিয়োগ কর্তা’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এমনকি একদিনের জন্য কর্মরত কোনো শ্রমিকের ক্ষেত্রেও নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ের কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার তৈরির প্রস্তাব করেছে কমিশন। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বিদ্যমান ‘শতকরা হারভিত্তিক’ পদ্ধতির পরিবর্তে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিকের সমর্থন পেলেই ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নারী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সব প্রতিষ্ঠানে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান চালুর প্রস্তাবও রয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
সম্প্রতি শ্রমিক আন্দোলনে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সুপারিশ করে কমিশন জানিয়েছে, শ্রমিকদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরির জন্য এটি জরুরি।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড রক্ষায় বড় অগ্রগতি হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
—
শ্রম আইনকে সর্বজনীন করার প্রস্তাব
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ
দুই মাসের বেতনের সমান তহবিল গঠন
‘মালিক’ শব্দের পরিবর্তে ‘নিয়োগ কর্তা’ ব্যবহার
নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক
কেন্দ্রীয় তথ্য ভাণ্ডার গঠন
ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে সহজ শর্ত
ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার