ঘটনাস্থলে উত্তেজনা, বিক্ষোভে উত্তাল উপজেলা সদরের সড়ক
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় বর্ষবরণ উৎসবের আনন্দঘন মুহূর্ত হঠাৎ রূপ নেয় উত্তেজনায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার সেলফ স্টিকের আঘাতে মাথা ফেটে গেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার। এই ঘটনা ঘটে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত এক বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে।
আহত এনসিপি নেতা হলেন উপজেলা শাখার সদস্য নাজমুস সাকিব তামিম। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বর্ষবরণ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দক্ষিণ জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল ও এনসিপি সদস্য মো. যামীমের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এই বাকবিতণ্ডা দ্রুত হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এনসিপি নেতা তামিমের মাথায় সেলফ স্টিক দিয়ে আঘাত করেন শাকিল, যা থেকে তার মাথা ফেটে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে উত্তেজনার মাত্রা বাড়ে এবং হাতাহাতিতে রূপ নেয়। উভয়পক্ষের আরও কয়েকজন সামান্য আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
আহত এনসিপি নেতা নাজমুস সাকিব তামিম বলেন, “শাকিল পরিকল্পনা করেই সেলফ স্টিক নিয়ে এসেছিল। সে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার উদ্দেশে আমার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে গেছে।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল বলেন, “বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আমার ছোট বোন জান্নাতুল রেখা ঝর্ণাকে নিয়ে উপস্থিত হই। এ সময় আমাকে নাগরিক কমিটির কয়েকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে টেনে-হেঁচড়ে কিল-ঘুষি মেরে আহত করেন।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার জানান, “উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে ঘটনাটি ঘটে। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উভয়পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। নেতাকর্মীরা ‘চাঁদাবাজের ঠিকানা, এ বাংলা হবে না’, ‘নাজমুস সাকিবের ওপর হামলা কেন, প্রশাসনের জবাব চাই’—এই ধরনের স্লোগানে রাস্তাজুড়ে উত্তেজনার আবহ তৈরি করে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের তাগিদ দিয়েছেন।
বর্ষবরণ উৎসবের মতো আনন্দঘন আয়োজন কোনো ধরনের সহিংসতায় কলঙ্কিত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। সামাজিক সম্প্রীতি ও রাজনৈতিক সহনশীলতা বজায় রাখতে এই ঘটনাটি একটি বড় উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয়রা।