ভারতজুড়ে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক
ভারতের সংসদে পাশ হওয়া বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিল ও দেশব্যাপী মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে আগামী ২৩ এপ্রিল ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলটি ভারত সরকারের ইসলামবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে চায়।
শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠকে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানদের নিধন চালিয়ে আসছে। উগ্র হিন্দু জঙ্গিদের লেলিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বাড়িঘর দখল, পবিত্র স্থানগুলো ভেঙে মন্দির নির্মাণ এবং ওয়াকফকৃত সম্পত্তি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ধর্মীয় আগ্রাসন চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াক্ফ সম্পত্তি মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। অথচ এখন বিজেপি সরকার এইসব সম্পত্তি জোরপূর্বক অধিগ্রহণ করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এই বিলে এসব দখলকে আইনগত বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
মাওলানা মামুনুল হক ভারতের মিডিয়া ও সরকারের বাংলাদেশবিরোধী প্রোপাগান্ডার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ভারতের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া কাহিনি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ মূলত ভারতে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের নীরবতা দুঃখজনক।”
তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সোচ্চার হওয়া জরুরি। তা না হলে ভারতের নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে।”
নববর্ষ উদযাপন প্রসঙ্গে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, “বাংলা নববর্ষ একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসব থেকে আগত সংস্কৃতি, যা মুসলমানদের ধর্মীয় আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পান্তা-ইলিশ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির বাহারি আয়োজন ইসলামী আকীদার পরিপন্থী।” তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জনগণের করের টাকা দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালানো উচিত নয়।”
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন এবং একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করবেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপের দাবি
সভায় আরও জানানো হয়, ভারতের ওয়াকফ বিল ও মুসলিম নিধনের প্রতিবাদ শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ওআইসি, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মামুনুল হক।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা রেজাউল করীম জালালী এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ভারতের ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ এবং মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে আলোড়ন তুলেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি এই ধরনের কর্মসূচি বাংলাদেশে ধর্মীয় ও কূটনৈতিক বিতর্ককেও নতুন মাত্রা দিচ্ছে।