দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সোনার দাম
বাংলাদেশে আবারও সোনার দামে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ২২ ক্যারেট মানের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম পৌঁছেছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এই দাম নির্ধারণ করেছে, যা রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকে সারা দেশে কার্যকর হবে।বাজুসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাবেই দেশীয় বাজারে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। তেজাবী সোনা, যাকে অনেকে পাকা সোনা বলেও চেনে, তা দিয়ে গলিয়ে পরিশোধিত সোনা তৈরি হয়। এ ধরণের সোনার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের খুচরা বাজারেও।
নতুন সোনার দর (প্রতি ভরি)
বাজুসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতিটি মান অনুযায়ী সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এভাবে—
সোনার মান | নতুন দাম (ভরি প্রতি) | আগের দাম | মূল্যবৃদ্ধি |
---|---|---|---|
২২ ক্যারেট | ১,৬৩,২১৪ টাকা | ১,৫৯,০২৭ টাকা | ৪,১৮৭ টাকা |
২১ ক্যারেট | ১,৫৫,৭৭৭ টাকা | ১,৫১,৬০২ টাকা | ৪,১৭৫ টাকা |
১৮ ক্যারেট | ১,৩৩,৪৩৮ টাকা | ১,২৯,৪০০ টাকা | ৪,০৩৮ টাকা |
তেজাবী সোনা | ১,১০,৬৩৪ টাকা | ১,০৬,৭৩৩ টাকা | ৩,৯০১ টাকা |
বাংলাদেশে এর আগে কখনো সোনার দাম এতটা বাড়েনি। গত কয়েক বছরে সোনার দাম স্থিতিশীল থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং স্থানীয় পর্যায়ে জুয়েলারি শিল্পে কাঁচামালের সংকটের কারণে সোনার দর একাধিকবার বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিও এ ধরণের পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।
সোনার দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, বিয়ের মৌসুমে এই দাম বৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আবার অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীরা এই মূল্যবৃদ্ধিকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
মোহাম্মদ রাসেল, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একজন জুয়েলারি দোকানদার বলেন:
“সোনার দাম বাড়লে ক্রেতার চাপ কমে যায়, তবে যারা বিনিয়োগ করতে চান তারা এ সময়েও সোনা কিনতে আগ্রহী থাকেন।”
১. বিয়ের মৌসুমে খরচ বাড়বে: গয়না কেনার খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাবে
২. জুয়েলারি ব্যবসায় ধীরগতি: দাম বাড়লে অনেকেই নতুন গয়না না কিনে পুরনো গয়না রিপ্লেস বা মেরামতের দিকে ঝুঁকবেন
3. বিনিয়োগ হিসেবে সোনার কদর বাড়বে: যারা সোনা কিনে সংরক্ষণ করেন, তাদের জন্য এটি লাভজনক হতে পারে
বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২,৪০০ মার্কিন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের টালমাটাল পরিস্থিতি, ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা—এসবই সোনার চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে।
সোনার বর্তমান দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। তবে বাজুস বলছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী দাম সামঞ্জস্য করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে ভবিষ্যতে দেশের বাজারেও মূল্য হ্রাস পেতে পারে।
আপনি যদি এখন সোনা কিনতে চান, তাহলে ভালোভাবে বাজার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সোনা দীর্ঘমেয়াদে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হলেও, ক্রয়ের সময় তাৎক্ষণিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা জরুরি।