তারিখ: ৫ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্ব অর্থনীতিতে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন করে উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর পাল্টা জবাব দিয়েছে বেইজিং। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া চীনের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ধস ও অস্থিরতা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঘোষণায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিরল পণ্যের আমদানির ওপর রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথাও জানায় চীন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি বাতিল না করলে তারা আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
চীনের এই পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পরই মার্কিন স্টক মার্কেটে শুরু হয় ব্যাপক পতন। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার দিনটি ছিল মার্কিন শেয়ারবাজারের জন্য এক ভয়াবহ দিন। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক কমেছে ৬ শতাংশ, প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক সূচক হারিয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, আর ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল সূচক ২,২০০ পয়েন্টেরও বেশি পড়ে গেছে, যা প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, টানা দুই দিন ধরে মার্কিন বাজারে এই ধসের প্রভাব শুধু দেশীয় অর্থনীতিতেই নয়, বরং বৈশ্বিক বাজারে শঙ্কার সঞ্চার করছে। বৃহস্পতিবারের (৩ এপ্রিল) আগেই এসঅ্যান্ডপি সূচক কোভিড-১৯ মহামারির পর সবচেয়ে খারাপ দিন অতিক্রম করেছিল।
এর আগের দিন, ২ এপ্রিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশের ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করা হবে। চীনের জন্য নির্ধারিত নতুন শুল্ক হার ৩৪ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী শুল্কসহ ৫৪ শতাংশে পৌঁছাবে। এছাড়া বাংলাদেশসহ নির্দিষ্ট কিছু দেশের ওপরও উচ্চতর শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে। তবে রাশিয়াকে এই শুল্ক তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়।
চীনের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘চীন ভুল খেলেছে। তারা আতঙ্কে রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তাদের এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই।’
বিশ্লেষকদের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হতে পারে। এতে শুধু দুই দেশের অর্থনীতিই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব বিস্তার করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির হুমকি ডেকে আনতে পারে।