ধর্মীয় সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ, ‘ওয়াকফ বিল মানি না’ স্লোগানে উত্তাল দেশ
নয়া দিল্লি, ৫ এপ্রিল ২০২৫:
ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাসের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র মুসলিম বিক্ষোভ। ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে রাজপথে নেমে এসেছে হাজারো মানুষ। কলকাতা, চেন্নাই, আহমেদাবাদ, লখনৌসহ একাধিক শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
গত বুধবার (২ এপ্রিল) গভীর রাতে ভারতের সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি পাস হয়। ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে পড়ে ২৮৮টি এবং বিপক্ষে ২৩২টি ভোট। এরপরই মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর বিক্ষোভের চিত্র আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের দানকৃত ধর্মীয়, শিক্ষামূলক ও সেবামূলক কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তি, যা বিক্রি বা হস্তান্তরযোগ্য নয়। নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবসহ সরকারের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা হবে। সরকারের দাবি, এই পরিবর্তন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
তবে মুসলিম নেতারা বলছেন, এই বিলের মাধ্যমে ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “গরিবদের উন্নয়নের কথা বলা হলেও, কোথাও তো মুসলমানদের জন্য বাড়ি, শিক্ষা, লোন বা পেনশনের কথা নেই।” তাই তাদের দাবি, এই বিল মূলত ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তৈরি।
কলকাতার রাস্তায় হাজারো মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘ওয়াকফ বিল মানি না’ স্লোগানে গর্জে ওঠেন। পোড়ানো হয় কুশপুত্তলিকা। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা।
আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভেও উত্তেজনার চিত্র ধরা পড়ে। এএনআই প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তার ওপর বসে থাকা বৃদ্ধ প্রতিবাদকারীদের পুলিশ জোরপূর্বক সরিয়ে দিচ্ছে। অল ইন্ডিয়া মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন-এর প্রধানসহ অন্তত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। স্বাক্ষরের পরই এটি আইনে পরিণত হবে। তবে তার আগেই দেশের মুসলিম সম্প্রদায় রাজপথে নেমে সরকারের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিচ্ছে— ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় তারা কোনোভাবেই পিছু হটবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ভারতে প্রায় ৯ লাখ একর ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। এই বিশাল সম্পদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই মূলত এই বিল আনা হয়েছে।