বিক্ষোভে উত্তাল তুরস্ক: এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবিতে জনরোষ
সম্প্রতি তুরস্ক জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং গণতন্ত্রের সংকোচনের কারণে তুরস্কের জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ইস্তানবুল, আঙ্কারা, ইজমিরসহ বিভিন্ন শহরে জনসাধারণ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছে।
তুরস্কে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি জনগণের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। গত কয়েক বছরে তুর্কি লিরার মান আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ভুল নীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার অভাবের কারণে এই সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের শাসনামলে তুরস্কে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলগুলোর নেতাদের গ্রেপ্তার, সংবাদ মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির নাগরিকরা ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
বিক্ষোভের ব্যাপকতা
তুরস্কের বিভিন্ন শহরে লক্ষাধিক মানুষ রাস্তায় নেমেছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে এবং এরদোয়ানের পদত্যাগ দাবি করছে। ইস্তানবুল ও আঙ্কারার প্রধান চত্বরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তুরস্কের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তুরস্কের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে এরদোয়ান সরকারকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এই বিক্ষোভ তুরস্কের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি সরকার কঠোর দমননীতি অবলম্বন করে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, জনগণের দাবি মানলে তুরস্কের রাজনৈতিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
তুরস্কের চলমান বিক্ষোভ দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একথা নিশ্চিত যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার শাসনামলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। দেশবাসী এখন সরকারের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে, যা নির্ধারণ করবে তুরস্কের আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে যাবে।