ঢাকা: দেশের জ্বালানি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন। আগামী এপ্রিল থেকেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু হচ্ছে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজেল সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে পরিবহন করা যাবে ২৭ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল, যা সাশ্রয় করবে ২৩৬ কোটি টাকা।
বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌপথ, ট্যাংক লরি এবং রেলওয়াগনের মাধ্যমে সারা দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। তবে এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ার পাশাপাশি চুরি ও অপচয়ের ঝুঁকি থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নদীতে নাব্য সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পরিবহন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে।
এসব সমস্যা সমাধানে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। শুরুতে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত করা হয়। অবশেষে সেই প্রকল্প এখন বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের এই ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল পরিবহনে সময় ও খরচ কমবে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে ছোট ছোট ট্যাংকারে করে তেল পরিবহনের কারণে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়, তা দূর হবে। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে পরিবহন সক্ষমতা ৫৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার সুযোগও রয়েছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন,
“পাইপলাইনটি চালু হলে জ্বালানি পরিবহন সহজ ও দ্রুত হবে। খরচ কমার পাশাপাশি অপচয় ও চুরি রোধ করা সম্ভব হবে। এতে ১৬ বছরের মধ্যেই ৩৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ উঠে আসবে।”
পাইপলাইনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্ক্যাডা (SCADA), টেলিকমিউনিকেশন ও ক্যাথেডিক সুরক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে পাইপলাইনটি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন,
“ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে বিপুল পরিমাণ তেল পরিবহন করা হয়। পাইপলাইনের মাধ্যমে তা নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে পরিবহন সম্ভব হলে দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের জ্বালানি খাতে বিপুল সুফল বয়ে আনবে।”