বাজারের তুলনায় কম দাম ও হয়রানির অভিযোগ
গাইবান্ধায় চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আশঙ্কাজনকভাবে কম ধান সংগ্রহ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এবং সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে নানা জটিলতার কারণে কৃষকরা গুদামের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। জেলা খাদ্য বিভাগ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে।
জানা গেছে, গত ইরি-বোরো মৌসুমে গাইবান্ধার ১১টি খাদ্য গুদামে ১৬ হাজার ১৩১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হলেও এবার আমন মৌসুমে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩৬৯ মেট্রিক টন। অথচ চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কৃষকদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
গাইবান্ধায় এবার ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়, এবং অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকার গত বছর ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কিনলেও এবার ৩৩ টাকা কেজি নির্ধারণ করে, যা মণপ্রতি ১,৩২০ টাকা। তবে স্থানীয় বাজারে কৃষকরা ১,৩০০ থেকে ১,৩৫০ টাকায় ধান বিক্রি করেছেন।
গাইবান্ধার কৃষকদের অভিযোগ, বাজারের তুলনায় সরকারি গুদামে ধানের দাম কম, তাছাড়া পরিবহন খরচ যুক্ত হওয়ায় গুদামে ধান বিক্রি করলে তাদের লোকসান গুনতে হয়। এছাড়া সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিতে গেলে নানা হয়রানি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষক ফরহাদ বলেন,
“বাড়ি থেকেই ব্যবসায়ীদের কাছে ভালো দামে ধান বিক্রি করা যায়। কিন্তু গুদামে ধান নিতে গেলে পরিবহন খরচ, শ্রম, সময় ও হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। এতে প্রতি মণে ১০০ টাকার বেশি লোকসান হয়। তাই আমরা ধান দিইনি।”
সদর উপজেলার তিনগাছ তলা এলাকার কৃষক মো. সেলিম মিয়া বলেন,
“সরকার যদি কৃষকদের উৎপাদন খরচ বিবেচনা করে ধানের দাম আরও বাড়াতো এবং হয়রানি মুক্তভাবে সরাসরি নগদ টাকায় ধান ক্রয় করতো, তাহলে কৃষকরা আগ্রহী হতো।”
গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মিজানুর রহমান স্বীকার করেছেন যে, আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে তিনি জানান,
“আগামী মৌসুমে কৃষকদের সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহী করতে উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি চাল আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ধান সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। তবে কৃষকদের অনাগ্রহের কারণে গুদামগুলো প্রায় খালি রয়ে গেছে।